“মুখে রাম বগলে ছুরি!” জি-র‍্যাম-জি বিল নিয়ে মোদী সরকারকে তুলোধোনা খাড়গের, মধ্যরাতে রণক্ষেত্র সংসদ

সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ লগ্নে এসে ‘এমজিএনরেগা’ (MGNREGA) বনাম ‘জি-র‍্যাম-জি’ (G RAM G) লড়াইয়ে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। মহাত্মা গান্ধীর নাম সরিয়ে নতুন আইন ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন’ আনার প্রতিবাদে মধ্যরাত পর্যন্ত উত্তপ্ত রইল রাজ্যসভা। বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও ওয়াকআউটের মধ্যেই ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল বিতর্কিত এই বিল।

“আবার কি দাস বানাতে চান?”— গর্জে উঠলেন খাড়গে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে সরকারকে নজিরবিহীন আক্রমণ শানান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “এমজিএনরেগা আনা হয়েছিল গরিবের মুখে অন্ন জোগাতে। আজ সেই অধিকার কেড়ে নিয়ে আপনারা তাঁদের আবার দাসত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।” সরকারের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে কটাক্ষ করে তিনি আরও যোগ করেন, “মুখে রাম, বগলে ছুরি—এটাই আপনাদের নীতি। গরিবের জন্য রাম নাম জপছেন আর পেছন থেকে ছুরি মারছেন।” খাড়গের হুঁশিয়ারি, ২০২১-এর কৃষি আইনের মতোই এই বিল প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করবে সাধারণ মানুষ।

সংসদ চত্বরে রাতভর ধর্না ও তৃণমূলের তোপ বিল পাশের প্রতিবাদে সংসদ ভবনের বাইরে ধর্নায় বসেন তৃণমূল-সহ বিরোধী সাংসদরা। ডেরেক ও’ব্রায়েন এই পদক্ষেপকে “জমিদারি মানসিকতা” বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, এমজিএনরেগা ছিল মানুষের আইনি অধিকার, আর নতুন বিলটি সেটাকে সরকারের ‘দয়া’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বিল পাশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে এমজিএনরেগা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজস্ব ‘কর্মশ্রী’ ও ‘মহাত্মশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে।

পাল্টা আক্রমণে শিবরাজ সিং চৌহান বিরোধীদের ওয়াকআউটকে কটাক্ষ করে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, “বক্তব্য রেখে পালিয়ে যাওয়া গান্ধীর আদর্শের অপমান।” তাঁর দাবি, এমজিএনরেগা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল, যা রুখতেই এই নতুন ও স্বচ্ছ আইন আনা হয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০০৯ সালের ভোটের আগে কংগ্রেস রাজনৈতিক স্বার্থে এই প্রকল্পে গান্ধীর নাম জুড়েছিল।

কী আছে নতুন ‘জি-র‍্যাম-জি’ (G RAM G) বিলে? কেন্দ্রের দাবি অনুযায়ী, নতুন আইনে কাজের গ্যারান্টি ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হয়েছে। তবে সমালোচকদের ভয়, এখন থেকে মানুষ নিজের প্রয়োজনে কাজ পাবেন না, বরং সরকারের পূর্বনির্ধারিত প্রকল্পের (যেমন জল সুরক্ষা বা পরিকাঠামো) ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হবে। ফলে সাধারণ মানুষের হাতে থাকা ক্ষমতা চলে যাবে প্রশাসনের হাতে।

সংসদীয় যুদ্ধে আপাতত সরকার জিতলেও, খাড়গে-মমতাদের সুর বুঝিয়ে দিচ্ছে—এই লড়াই এবার আছড়ে পড়বে ভারতের রাজপথে।