‘নারীর সম্মানে হাত দিলে বাংলা ছেড়ে কথা বলবে না!’ ওড়না-হিজাব বিতর্কে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া হুঁশিয়ারি প্রিয়দর্শিনীর

সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল প্রতিবাদ এবার বাস্তবের রাজপথে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিতর্কিত ‘হিজাবকাণ্ডের’ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল তিলোত্তমা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাস ময়দান থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত এক বিশাল মশাল মিছিলে পা মেলালেন হাজার হাজার নারী। এই প্রতিবাদী মিছিলে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিলেন সমাজকর্মী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম।

কী ঘটেছিল পটনায়? সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিও-কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে (যার সত্যতা যাচাই করেনি ডেইলিহান্ট)। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এক আয়ুষ চিকিৎসকের হিজাব বা মাথার আবরণ জোর করে সরিয়ে দিচ্ছেন। এই ঘটনায় বিশিষ্ট গীতিকার জাভেদ আখতার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। সেই প্রতিবাদের আঁচই এবার আছড়ে পড়ল কলকাতার রাজপথে।

‘এটা আমার কল্পনার অতীত’: প্রিয়দর্শিনী মিছিল শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগরে দেন প্রিয়দর্শিনী। তিনি বলেন, “ভিডিওটি প্রথম দেখে আমি ভেবেছিলাম এটি হয়তো কোনো এআই (AI) জেনারেটেড ভিডিও। কারণ একজন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য মঞ্চে একজন মহিলার পর্দা বা ওড়না টেনে নামাবেন, এটা আমার কল্পনারও অতীত।”

কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও যোগ করেন, “যারা মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের যদি এই মানসিকতা হয়, তবে তা অত্যন্ত ভয়ের। আমাদের দেশে নারীর সম্মানে হাত দেওয়া মানে ভারতবর্ষের সম্মানে হাত দেওয়া।”

সম্মান ছিনিয়ে নিতে জানে বাংলার মেয়েরা বাংলার নারীশক্তির ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রিয়দর্শিনী স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, “কাল যদি আমার ওড়না বা সালোয়ার কামিজ ধরে কেউ টানে, আমরা কি চুপ করে থাকব? সমাজ বদলে গিয়েছে। একটা মেয়েকে সম্মান দিতে না পারলে, মেয়েরা সম্মান ছিনিয়ে নিতে জানে।”

এদিনের মিছিলে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে মহিলারা ‘হাত হঠাও’ স্লোগান তুলে শামিল হন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর রুবিনা নাজ-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

সরব মেয়র ফিরহাদ হাকিমও মেয়ের পাশাপাশি এই ঘটনায় সরব হয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেন, “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে নরকবাস। যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করি, তাঁদের অপমান মানে গোটা দেশের অপমান।”

শাড়ি হোক বা হিজাব—নারীর পোশাক ও সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার যে কারও নেই, মশাল হাতে কলকাতার এই মিছিল সেই বার্তাই দিল গোটা দেশকে।