১০০ কোটির জরিমানা মকুব! মেয়াদের শেষে বিচারপতির ‘অদ্ভুত’ তৎপরতায় তুঙ্গে বিতর্ক, কড়া দাওয়াই শীর্ষ আদালতের।

বিচারব্যবস্থার অন্দরে লুকিয়ে থাকা এক ‘দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা’ নিয়ে এবার গর্জে উঠল সুপ্রিম কোর্ট। কর্মজীবনের শেষ বেলায় এসে কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রায় দেওয়ার যে সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, তাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশের এক জেলা জজের সাসপেনশন সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতেই এই বিস্ফোরক মন্তব্য এল শীর্ষ আদালত থেকে।

ঠিক কী অভিযোগ ওই বিচারকের বিরুদ্ধে? বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলার মুখ্য জেলা ও দায়রা বিচারক রাজারাম ভার্তিয়া। আগামী ৩০ নভেম্বর তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মাত্র ১০ দিন আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। অভিযোগ, অবসরের ঠিক আগে তিনি এমন কিছু রায় দিয়েছেন যা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।

১০০ কোটির জরিমানা ও প্রভাবশালী যোগ: ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের এক প্রভাবশালী নেতার স্টোন ক্রাশার ফার্মকে ঘিরে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে জেলা কালেক্টর ওই নেতার ওপর ১০০ কোটি টাকার জরিমানা চাপিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারক রাজারাম তাঁর অবসরের ঠিক মুখে কালেক্টরের সেই নির্দেশ খারিজ করে দেন। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রশাসনিক বিভাগ বিষয়টিকে খতিয়ে দেখে সর্বসম্মতভাবে তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির ‘কড়া’ পর্যবেক্ষণ: সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে ওই বিচারক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন:

“আবেদনকারী অবসরের ঠিক আগে হঠাৎ ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেন! এটা একটা দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। কোনো ভুল রায়ের জন্য শাস্তি হয় না ঠিকই, কিন্তু রায় যদি স্পষ্টতই অসৎ হয়, তবে কড়া ব্যবস্থা অনিবার্য।”

অবসরের আগে ‘অর্ডার’-এর হিড়িক: আদালতে বিচারকের আইনজীবী দাবি করেন যে তাঁর মক্কেলের সার্ভিস রেকর্ড ভালো। কিন্তু প্রধান বিচারপতি পাল্টা যুক্তি দেন যে, ওই সময় বিচারক জানতেন না যে রাজ্য সরকার অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৬২ বছর করেছে। তিনি ভেবেছিলেন চাকরি জীবন শেষ হতে চলেছে, আর সেই কারণেই তাড়াহুড়ো করে এই বিতর্কিত রায়গুলি দিয়েছিলেন।

সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। কেন আগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হননি তিনি, তা নিয়েও ভর্ৎসনা করা হয়। বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সুপ্রিম কোর্টের এই কড়া অবস্থান এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।