পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘বজ্রপাত’! ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল হাইকোর্ট, প্রতিবাদে সব স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

নিয়োগ দুর্নীতির কালো ছায়া এবার সমতল ছাড়িয়ে পাহাড়ের শিখরে। কলকাতা হাইকোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA)-র অধীনস্থ ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চ এই নিয়োগকে ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’ বলে ঘোষণা করায় পাহাড়ের রাজনীতি ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

আদালতের কড়া অবস্থান ও সিআইডি তদন্ত
নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চলছিল। সিআইডি (CID) তাদের তদন্ত রিপোর্টে আদালতকে জানায়, ওই ৩১৩ জন শিক্ষকের নিয়োগে পাহাড়প্রমাণ কারচুপি হয়েছে। বিচারপতি বসু কেবল চাকরি বাতিলই করেননি, তাঁদের বেতন অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতেই বহাল রাখা হয়েছে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, নিয়োগের ক্ষেত্রে নুন্যতম নিয়মবিধিও মানা হয়নি।

কেন এই নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক?
বাম আমল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কয়েকশো শিক্ষককে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিনয় তামাং এবং অনীত থাপার আমলে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাঁদের স্থায়ী বা নিয়মিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, এই প্রক্রিয়ার নেপথ্যে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে পাহাড়ের প্রথম সারির নেতাদের হাত ছিল এবং বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। জিটিএ-র পক্ষ থেকে ‘বিশেষ পরিস্থিতির’ দোহাই দেওয়া হলেও আদালত তা গ্রাহ্য করেনি।

পাহাড়জুড়ে বনধের ডাক: স্তব্ধ পঠনপাঠন
হাইকোর্টের এই রায়ের প্রতিবাদে ফুঁসছে পাহাড়ের শিক্ষক মহল। ‘সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন’-এর ডাকে বৃহস্পতিবার থেকে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার সমস্ত জিটিএ স্কুল অনিশ্চিতকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার এই মরসুমে স্কুল বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।

অনীত থাপার পাল্টা চাল
পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে নেমেছেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা। তিনি বলেন, “আমি কাউকে হতাশ হতে দেব না। শিক্ষকদের ন্যায়বিচারের জন্য আমরা উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হব।” যদিও আইনজ্ঞদের মতে, হাইকোর্টের এই রায়ের পর শিক্ষকদের আইনি লড়াই অত্যন্ত কঠিন হতে চলেছে।

শৈলশহরের পর্যটন মরসুমের মাঝেই এই প্রশাসনিক ‘ধাক্কা’ পাহাড়ের রাজনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়, এখন সেটাই দেখার।