পৌষমেলার শান্তিনিকেতনে হাহাকার! রাতদুপুরে থালা হাতে বিক্ষোভে বিশ্বভারতীর ছাত্রীরা, কেন উত্তাল ক্যাম্পাস?

উৎসবের আলোয় যখন সাজছে শান্তিনিকেতন, তখন অন্ধকারের কবলে বিশ্বভারতীর ছাত্রীরা। ৩১ তারিখ পর্যন্ত কুপনের টাকা জমা থাকলেও হঠাৎ বন্ধ হস্টেলের রান্নাঘর! পৌষমেলার ছুটির অজুহাত দেখিয়ে জেনারেল কিচেন খাবার দিতে অস্বীকার করায় মঙ্গলবার গভীর রাতে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাস।

থালা বাজিয়ে মাঝরাতে প্রতিবাদ মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘুম ছুটল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। শ্রীসদন ও বিড়লা গোয়েঙ্কা হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হিন্দি ভবন সংলগ্ন সেকেন্ড গেটের সামনে থালা বাজিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদে সামিল হন শয়ে শয়ে ছাত্রী। তাঁদের অভিযোগ, একদিকে জেনারেল কিচেন থেকে খাবার দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, অন্যদিকে হস্টেলের কঠোর নিয়মের দোহাই দিয়ে বাইরে থেকে খাবার আনতেও বাধা দিচ্ছে প্রশাসন। এই দুই সাঁড়াশির চাপে কার্যত অনাহারের মুখে ছাত্রীরা।

অব্যবস্থার পাহাড়: নিম্নমানের খাবার ও আকাশছোঁয়া দাম ছাত্রীদের অভিযোগ শুধু পৌষমেলার এই ক’দিন নিয়ে নয়। তাঁদের দাবি:

কুপন কাটা থাকলেও ছুটির নাম করে মাঝপথে খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত দাম নিয়েও নিয়মিত দেওয়া হয় অত্যন্ত নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর খাবার।

হস্টেলে রাত ৯:৩০-এর মধ্যে ঢোকার বিধিনিষেধ থাকায় বাইরে গিয়ে খাওয়ার উপায় নেই।

মেলার সময় স্থানীয় বাজার বন্ধ থাকায় বিকল্প খাবারের জোগাড় করাও অসম্ভব।

ধমকি আর ভিডিও রেকর্ডিং-এর অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে আরও মারাত্মক। ছাত্রীরা যখন নিজেদের ন্যায্য অধিকারের দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন, তখন সমাধানের বদলে ওয়ার্ডেন ও বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিকরা তাঁদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। এমনকি প্রতিবাদী ছাত্রীদের চিহ্নিত করতে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন ছাত্রীরা।

কর্তৃপক্ষের নীরবতা ক্যাম্পাস জুড়ে এত বড় কাণ্ড ঘটলেও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বয়ান পাওয়া যায়নি। তবে ছাত্রীরা সাফ জানিয়েছেন, এই ‘তুঘলকি শাসন’ আর নয়। দ্রুত পুষ্টিকর খাবার এবং নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার গ্যারান্টি না মিললে পৌষমেলার ভিড়েই বড়সড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা।

শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার আনন্দ কি তবে পড়ুয়াদের এই ক্ষুধার্ত প্রতিবাদের আড়ালে ম্লান হয়ে যাবে? প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।