পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই দেখা গেল এক চাঞ্চল্যকর ছবি। সংশোধিত তালিকা থেকে এক ধাক্কায় প্রায় ৪৫ হাজার ভোটারের নাম বাদ পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই তথ্য সামনে আসার পরই স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব জরুরি বৈঠকে বসেছেন এবং বুথ স্তরের এজেন্টদের (BLA) বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাদ পড়া সকল ভোটারের নাম যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে খবর, ‘সিস্টেমেটিক ইন্টিগ্রেটেড রিভিশন’ (SIR)-এর খসড়া তালিকা থেকে ভবানীপুর কেন্দ্রে মোট ৪৪,৭৮৭ জন ভোটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যা এই হাই-প্রোফাইল আসনের মোট ভোটারের প্রায় ২১.৭ শতাংশ!

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভবানীপুরে মোট ভোটার ছিল ২ লক্ষ ৬ হাজার ২৯৫ জন। কিন্তু নতুন খসড়া তালিকায় মাত্র ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০৯ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় এক পঞ্চমাংশের বেশি ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

😡 তৃণমূলের তীব্র আপত্তি: কেন বাদ পড়ল এত নাম?

তৃণমূল কংগ্রেস এই বিশাল সংখ্যক নাম বাদ পড়ার ঘটনায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। দলের অভিযোগ, বিপুল সংখ্যক ভোটারকে মৃত, স্থানান্তরিত বা অনুপস্থিত ঘোষণা করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও বৈধ ভোটারের নাম যাতে কোনও অবস্থাতেই বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বুথে তালিকা যাচাই করা হবে।

ভবানীপুর নির্বাচনী এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৮, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। দলীয় সূত্রে খবর, বাদ পড়াদের সংখ্যা বিশেষ করে ৭০, ৭২ এবং ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে বেশি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ঝাড়াই-বাছাইয়ের’ সময় বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

ভবানীপুর একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে কেন্দ্র, যেখানে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং ওড়িশার বাসিন্দাদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের বাদ পড়ার ঘটনা সেখানকার রাজনৈতিক সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

🏠 ভোটারদের পাশে ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্পেইন

খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমানে দাবি এবং আপত্তি জানানোর পাশাপাশি শুনানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস স্থানীয় নেতৃত্বকে বাদ পড়া ভোটারদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।

ভোটারদের সহায়তার জন্য তৃণমূলের স্থানীয় ইউনিটগুলি ‘মে আই হেল্প ইউ’ নামে পাড়া স্তরের ক্যাম্প চালাচ্ছে। এই ক্যাম্পগুলির মাধ্যমে নথি যাচাইকরণ, ফর্ম ফাইলিং এবং শুনানিতে সাধারণ মানুষকে সরাসরি সহায়তা করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকরা ঘরে ঘরে গিয়েও ভোটারদের সাহায্য করছেন।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি বিধানসভা কেন্দ্র— ভবানীপুর, কলকাতা বন্দর, বালিগঞ্জ এবং রাসবিহারী থেকে সম্মিলিতভাবে ২ লক্ষ ১৬ হাজারের বেশি নাম বাদ গিয়েছে বলে জানা গেছে। SIR প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে এই চারটি কেন্দ্রে মোট ভোটারের প্রায় ২৪ শতাংশ বাদ পড়েছে, যা বাংলায় আসন্ন নির্বাচনের আগে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করল।