মনরেগার নাম বদলে ‘জিরামজি’ বিল আনল কেন্দ্র, মহাত্মা গান্ধির নাম বাদ যাওয়ায় সংসদ চত্বরে বিরোধীদের তীব্র বিক্ষোভ

কেন্দ্রের মোদি সরকার মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম (মনরেগা)-এর পরিবর্তে নয়া ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীন) (ভিবি-জি রাম জি), ২০২৫’ বিল পেশ করায় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নতুন বিলে মহাত্মা গান্ধির নাম বাদ দেওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি।
সংসদ চত্বরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বিক্ষোভ
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি নাম পরিবর্তনকে সরাসরি মহাত্মা গান্ধির অপমান বলে অভিহিত করেছেন। এর প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের সাংসদরা। মহাত্মা গান্ধির ছবি হাতে তাঁর মূর্তির পাদদেশে জড়ো হন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, কেসি বেণুগোপাল, ডিএমকে-এর টিআর বালু-সহ অন্যান্য নেতারা।
নয়া বিলের পক্ষে কেন্দ্রের যুক্তি
মঙ্গলবার লোকসভায় বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। মহাত্মা গান্ধির নাম বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মহাত্মা গান্ধি আমাদের হৃদয়ে রয়েছেন। আমরা তাঁর এবং পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নীতি অনুসরণ করে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। এর আগে কংগ্রেসও জওহর রোজগার যোজনার নাম বদলেছিল। তার মানে কি তারা নেহরুকে অসম্মান করেছিল?”
বিজেপি সাংসদ দীনেশ শর্মা জানান, এই বিল ১০০ দিনের কাজের বদলে ১২৫ দিনের কাজের নিশ্চয়তা দিচ্ছে এবং এর ফলে জল সুরক্ষা, গ্রামীণ পরিকাঠামো এবং পরিবেশগত দিকগুলি অগ্রাধিকার পাবে।
কেন বিরোধিতা করছেন বিরোধীরা?
মহাত্মা গান্ধির অপমান: রাহুল গান্ধি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “মোদিজি দু’টি জিনিস একেবারে পছন্দ করেন না—মহাত্মা গান্ধির আদর্শ এবং গরিবদের অধিকার।”
অধিকার দুর্বল হচ্ছে: প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেন, নতুন বিলে কাজের দিন বাড়ানো দেখালেও মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে স্পষ্টতা নেই এবং দরিদ্র মানুষের কাজের অধিকার দুর্বল করা হয়েছে।
ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ: প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, নয়া বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে কোথায়, কী কাজ হবে এবং কত টাকা বরাদ্দ হবে, তার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিচ্ছে।
অর্থ বরাদ্দ হ্রাস: প্রিয়াঙ্কা অভিযোগ করেন, এমজিএনআরইজিএ-তে কেন্দ্র যেখানে ৯০ শতাংশ অর্থ দিত, সেখানে নতুন প্রকল্পে মাত্র ৬০ শতাংশ (বিশেষ রাজ্য ছাড়া) দেবে।
‘রাম কা নাম বদনাম না করো’: কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, নাম বদল একটি ‘প্রশাসনিক চালাকি’ এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের আত্মা ও দর্শনের অপমান। তিনি লোকসভায় বলেন, “শৈশবের একটি গানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে—দেখো ও দিওয়ানো, ইয়ে কাম মাত করো, রাম কা নাম বদনাম না করো।”
নয়া বিলের মূল বৈশিষ্ট্য
‘ভিবি-জি রাম জি, ২০২৫’ বিল অনুযায়ী:
প্রতি অর্থবর্ষে গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যকে অদক্ষ হলেও ১২৫ দিনের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
বিশেষ রাজ্য (উত্তর-পূর্ব ও হিমালয় উপত্যকার রাজ্য) ছাড়া দেশের বাকি রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করবে।
উত্তর-পূর্ব ও হিমালয় উপত্যকার রাজ্যগুলির জন্য এই হার ৯০:১০।
বিরোধীরা এই বিলটিকে স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে।