UNSC-তে পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের কড়া আক্রমণ! ‘ইমরান জেলে, জেনারেলকে আজীবন সুরক্ষা কেন?’

নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) ভারত এবার সরাসরি পাকিস্তানের গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। গত বুধবার এক খোলা বিতর্কে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত হরিশ পারভথানেনি স্পষ্ট জানান যে পাকিস্তান তাদের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জেলে পুরে এবং প্রতিরক্ষা প্রধান আসিম মুনিরকে আজীবন সুরক্ষা দিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে চরমভাবে উপেক্ষা করেছে।
পারভথানেনি বলেন, “পাকিস্তান তার জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর এক অদ্ভুত পদ্ধতি খুঁজে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে কারাবন্দী করা, শাসক রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সাংবিধানিক অভ্যুত্থানের অনুমতি দেওয়া—পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে আজীবন নিরাপত্তা দেওয়া—এই সবকিছুই গণতন্ত্রের জন্য একটি মারাত্মক বিপদ।” তিনি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামরিক নেতৃত্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার উপর আলোকপাত করে বলেন, এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য গুরুতর বিপদ তৈরি করছে।
কাশ্মীর ও লাদাখ: ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ
UNSC-তে ভারত আবারও জোরালোভাবে বলেছে যে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ ভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য অংশ। পারভথানেনি ঘোষণা করেন, “এই অঞ্চলগুলি ভারতের ছিল, ভারতের আছে এবং সবসময় ভারতেরই থাকবে। পাকিস্তানের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এর কোনো বৈধ ভিত্তি নেই।”
সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা
এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Water Treaty) স্থগিত করার কারণও ব্যাখ্যা করেছে। পারভথানেনি জানান, ৬৫ বছর আগে ভারত বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার মনোভাব নিয়ে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু এই বছরগুলিতে পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধ এবং হাজার হাজার জঙ্গি হামলা চালিয়ে চুক্তির মূল ভাবমূর্তি লঙ্ঘন করেছে। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিশ্বকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যতক্ষণ না তারা সীমান্তপার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদে তাদের সমর্থন পুরোপুরি বন্ধ করছে, ততক্ষণ এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।”
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং ভারতের পাল্টা জবাব
পাকিস্তানের প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমেদ সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করাকে আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন বলে দাবি করেন এবং জম্মু-কাশ্মীরকে ‘অমীমাংসিত বিবাদ’ বলে আখ্যা দেন।
তবে ভারত তার দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তানকে সরাসরি সন্ত্রাসবাদ মদত দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে। রাষ্ট্রদূত পারভথানেনি বলেন, গত চার দশকে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের কারণে হাজার হাজার ভারতীয়র প্রাণহানি হয়েছে। তিনি পহেলগামের সাম্প্রতিক ঘটনাটিরও উল্লেখ করেন, যেখানে একজন বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ জন নিহত হন। ভারতের স্পষ্ট বার্তা—পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং সামরিক বাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি শুধুমাত্র তাদের গণতন্ত্রের জন্যই নয়, আঞ্চলিক শান্তির জন্যও বিপদ। এই বিতর্ক আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের ভাবমূর্তিকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।