‘ধর্মীয় নিপীড়িতদের জেলে কেন?’ কেন্দ্রের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট, ১৫ দিনের মধ্যে হলফনামা তলব!

বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আসা সংখ্যালঘু হিন্দু নাগরিকদের বিভিন্ন জেলে আটকে রাখার গুরুতর অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হল কলকাতা হাই কোর্ট। বন্দিদের মুক্তির আবেদন সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রের নিষ্ক্রিয়তা ও ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করল আদালত।
কেন্দ্রের অবস্থান নিয়ে ক্ষুব্ধ বেঞ্চ: ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি পার্থ সারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের অবস্থানে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী ফের একবার অতিরিক্ত ১৫ দিনের সময় চাইলে বিচারপতিরা ক্ষুব্ধ হন। সময় চাওয়ার কারণের সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পেরে কেন্দ্রের আইনজীবী যখন উল্টো রাজ্যের দিকে দায় ঠেলার চেষ্টা করেন, তখন বিচারপতিরা আরও অসন্তুষ্ট হন।
১৫ দিনের মধ্যে হলফনামা জমার নির্দেশ: বিচারপতিদের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আর কোনো মৌখিক যুক্তি নয়। আদালত (Calcutta High Court) নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্র, দু’পক্ষকেই তাদের অবস্থান লিখিত হলফনামার মাধ্যমে আদালতে জানাতে হবে।
মামলার মূল অভিযোগ ও কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা: কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে আগত সংখ্যালঘু হিন্দু শরণার্থীদের দেশের বিভিন্ন জেলে আটক রাখা হয়েছে। মামলাকারীদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও নিম্ন আদালত নানা অজুহাতে তাঁদের জামিন দিচ্ছে না।
২০২৫-এর নির্দেশিকা কী বলছে? মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশন) অর্ডার, ২০২৫’ অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান) নাগরিকরা বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন। এই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হলে তাঁরা ভারতে আশ্রয় নিতে পারবেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
সম্প্রতি সোনালী খাতুন-সহ ছয়জন পরিযায়ীকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে চিহ্নিত করে দিল্লি থেকে অসম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। আদালতে তাঁরা দাবি করেছিলেন যে, তিন প্রজন্ম ধরে তাঁরা বীরভূমের মুরারইয়ের পাইকর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এই নির্দেশিকার পরও তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে কি না, তা নিয়েও আইনি মহলে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।