রাজ্যের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত; বিজেপি সভাপতির প্রশ্নের উত্তরে সংসদে ONGC-র দ্রুত উত্তোলন শুরুর ঘোষণা

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে আবিষ্কৃত বিপুল পরিমাণ তেল ভান্ডার নিয়ে সোমবার সংসদে (Ashoknagar Oil Reserve) গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে যে, উত্তোলন প্রক্রিয়া সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং দ্রুত বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। এই তেল ভান্ডারের সম্ভাব্য আর্থিক মূল্য প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেন শমীক ভট্টাচার্য।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের আশ্বাস: কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের মন্ত্রী হরদ্বীপ সিং সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, অশোকনগরে তেল ও গ্যাস উৎপাদন শুরু হওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা তিনি সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারছেন। তিনি আশ্বস্ত করে জানান, ডিসেম্বর মাসেই ONGC এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান হয়েছে, যার নথি তাঁর হাতে এসেছে।

মন্ত্রী স্পষ্ট করেন, উৎপাদন শুরু করা নিয়ে নতুন করে কোনও জটিলতা তৈরি হয়নি এবং সব প্রস্তুতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তিনি বলেন, “আর কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। যদি সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে, তাহলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তেল ও গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে।”

তেলের গুণমান এবং বিনিয়োগ: অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি) ২০১৮ সালে প্রথম অশোকনগরে তেলের সন্ধান পায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের উত্তরে জানানো হয়েছে যে, এখানকার তেলের গুণমান অত্যন্ত উচ্চ। ক্রুড অয়েলের এপিআই গ্র্যাভিটি ৪০-৪১ ডিগ্রি, যা বিশ্বমানের এবং বোম্বে হাইয়ের থেকেও ভালো।

ওএনজিসি ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২০ সালে উত্তোলন শুরু হলেও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পেট্রোলিয়াম মাইনিং লিজ (PML) পেতে দেরি হওয়ায় কাজে বাধা পড়েছিল।

রাজ্যের অর্থনীতিতে প্রভাব: শমীক ভট্টাচার্য সংসদে এই বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “এই তেল ভান্ডারের সম্ভাব্য মূল্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এটি রাজ্যের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা নেবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় দ্রুত উত্তোলন শুরু করলে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং রাজ্যের রাজস্ব বাড়বে।”

যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বলেছেন যে, রাজ্য সবসময় কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এবং পরিবেশ ও স্থানীয় মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে প্রকল্প এগোচ্ছে। দ্রুত উত্তোলন শুরু হলে রাজ্যের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্প থেকে দৈনিক শত শত ব্যারেল তেল উত্তোলন সম্ভব, যা দেশের জ্বালানি আমদানি কমাতে সাহায্য করবে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই প্রকল্প ঘিরে এলাকার উন্নয়ন এবং চাকরির সুযোগ বাড়ার আশায় উচ্ছ্বসিত।