৫৬ হাজারের হাতে বিশ্বের ৯০% সম্পদ, উঠে এলো চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

সেই চিরাচরিত ধারণা, ‘ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরিবরা আরও গরিব’, এবার আরও ভয়াবহ রূপে সামনে এল। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি রিপোর্ট’ (World Inequality Report) ২০২৬ বিশ্বজুড়ে সম্পদের বণ্টনে যে গভীর বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.০০১ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ৫৬ হাজার ‘সুপার রিচ’ (Super Rich) বা ধনকুবেরের হাতে রয়েছে বিশ্বের অর্ধেক গরিব জনসংখ্যার চেয়েও তিন গুণ বেশি সম্পদ!
💰 ৫৬ হাজার মানুষের কাছে ৪০০ কোটি মানুষের সম্পদের ৩ গুণ!
রিপোর্টের তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এই বৈষম্য কতটা ভয়াবহ:
-
বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ধরলে, ০.০০১ শতাংশ সুপার রিচ মানে প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ।
-
এই ৫৬ হাজার মানুষের কাছে যে সম্পদ রয়েছে, তা বিশ্বের প্রায় ৪০০ কোটি (৫০%) দরিদ্র মানুষের মোট সম্পদের থেকেও তিন গুণ বেশি!
-
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বের মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে ৯০ শতাংশ মানুষের সম্পদ।
রিপোর্টের লেখক রিকার্ডো গোমেজ সতর্ক করে বলেছেন, “যত দিন এই মানুষগুলি (গরিব) চুপ করে থাকবে, ততদিনে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে যাবে।” এই ধরনের বৈষম্যতা বিশ্বকে এক কল্পনাতীত ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
♻️ কার্বন দূষণের ৭৭ শতাংশের জন্য দায়ী ধনীরা
জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) নিয়েও রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই বৈষম্য:
-
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ একাই মোট কার্বন নিঃসরণের ৭৭ শতাংশের জন্য দায়ী।
-
অন্যদিকে, সবচেয়ে গরিব ৫০ শতাংশ মানুষ মোট দূষণের মাত্র ৩ শতাংশ ঘটান।
💡 বৈষম্য কমাতে সমাধান সূত্র: ন্যূনতম কর ও সরাসরি সহায়তা
‘ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি রিপোর্ট’-এ এই ভয়াবহ অসাম্য কমাতে কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে:
১. প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা: অসাম্য কমাতে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা (Progressive Tax) জোরদার করা জরুরি।
২. ধনীদের জন্য ন্যূনতম ট্যাক্স: আন্তর্জাতিক স্তরে ধনীদের জন্য ন্যূনতম ট্যাক্স বাধ্যতামূলক করা।
৩. ট্যাক্স ফাঁকি রোধ: ট্যাক্স ফাঁকি (Tax Evasion) রোধে দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো, যাতে জনসেবার জন্য আরও অর্থ জোগাড় করা যায়।
৪. জনসেবায় বিনিয়োগ: উচ্চমানের বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুষ্টি ও শিশু-পরিচর্যার মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবায় বিনিয়োগ বাড়ানো, যাতে শুরু থেকেই বৈষম্য কমানো যায় এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়।
৫. সরাসরি আর্থিক পুনর্বণ্টন: অর্থ পুনর্বণ্টনের পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেমন— নগদ ভাতা (Cash Transfer), পেনশন ও বেকার ভাতার মাধ্যমে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের হাতে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দেওয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার জি-২০ সভাপতিত্বের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই রিপোর্টে দুটি বড় সংকটের কথা বলা হয়েছে— বিশ্ব বৈষম্য দ্রুত বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়ছে।