হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিবের বিরুদ্ধে ২০টি FIR, কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ

দেশের জনপ্রিয় হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিব এখন বড়সড় জালিয়াতির অভিযোগে খবরের শিরোনামে। তাঁর এবং তাঁর ছেলে আনাস হাবিব সহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশের সম্ভল জেলায় এখনও পর্যন্ত ২০টি এফআইআর (FIR) নথিভুক্ত হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা কয়েক’শ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন। পুলিশ এই পরিবারের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করেছে এবং দিল্লি ও মুম্বইতে তাঁদের বাসস্থানে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতারণার পরিকল্পনা: ‘৫০-৭৫% রিটার্নের’ ফাঁদ
পুলিশের তদন্ত অনুসারে, এই জালিয়াতির মূল পরিকল্পনাটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। সম্ভলের সরাইট্রেন এলাকার একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে FLC (Follicile Global Company) নামে একটি কোম্পানিকে তুলে ধরা হয়। মঞ্চে জাভেদ হাবিব এবং তাঁর ছেলে আনাস হাবিব প্রায় ১৫০ জন বিনিয়োগকারীকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, FLC কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নিশ্চিত রিটার্ন মিলবে।
বিনিয়োগকারীদের বাইনান্স কয়েন এবং বিটকয়েনের নামে লোভ দেখানো হয়েছিল। ১০০ জনেরও বেশি লোক সেই ফাঁদে পা দেন এবং প্রত্যেকে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন। অভিযোগ, কয়েক মাসের মধ্যেই কোম্পানিটি উধাও হয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা কোনো লাভ পাননি।
কোটি কোটি টাকার প্রতারণা ও হুমকি
এক বছর কেটে গেলেও বিনিয়োগকারীরা তাঁদের টাকা ফেরত পাননি। তাঁরা বারবার কোম্পানির অফিস এবং হাবিবসের সেলুনে যেতে শুরু করেন। যখন তাঁরা টাকা ফেরত দাবি করেন, তখন কোম্পানির স্থানীয় ইনচার্জ সাইফুল্লাহ তাঁদের এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই জাভেদ হাবিবের অফিসটি তালাবদ্ধ হয়ে যায়।
প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা জাভেদ হাবিব এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে রায়সত্তি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তাঁরা উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী হেয়ার কাটিং শিল্পের চেহারা বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে জাভেদ হাবিব তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছেন। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কমপক্ষে ১০০ জন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) কে.কে. বিষ্ণোই-এর নির্দেশে এই মামলায় প্রতারণা (ধারা ৪২০) এবং অপরাধমূলক ভয় দেখানো (ধারা ৫০৬) সহ মোট ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, টাকা ফেরত চাইলে কিছু বিনিয়োগকারীকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
তদন্তে স্ত্রী-র ভূমিকা এবং পারিবারিক ষড়যন্ত্র
তদন্তে জানা গেছে, জাভেদ হাবিবের স্ত্রী FLC কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। এতে পুরো জালিয়াতিটি পারিবারিক পর্যায়ে পরিকল্পিত ছিল বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। সম্ভল পুলিশ আশঙ্কা করছে যে হাবিব পরিবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তাই তাদের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করা হয়েছে। এসপি বিষ্ণোই নিশ্চিত করেছেন যে জাভেদ হাবিবের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং সম্পত্তির তদন্ত শুরু করা হয়েছে।