তিস্তার তাণ্ডবে ফের বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ! মুখ্যমন্ত্রীর ‘ম্যান মেড বন্যা’ মন্তব্যের আবহে ফিরল ‘৬৬-র স্মৃতি, কী ঘটেছিল সেদিন?

শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকার মতো নদীগুলোর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গোটা অঞ্চলে আছড়ে পড়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়। বিশেষত দার্জিলিংয়ের বহু রাস্তায় নেমেছে ধস এবং তিস্তার জলোচ্ছ্বাসের কারণে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার নবান্নের তরফে কন্ট্রোল রুম খোলা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা ঘটনাটিকে ‘ম্যান মেড বন্যা’ আখ্যা দিয়েছেন।
আর ঠিক এই দুর্যোগের আবহে, ৫৬ বছর আগেকার আরও একটি ৪ অক্টোবরের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে এল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সালটা ছিল ১৯৬৮। তিস্তার সেই প্রলয়ঙ্কর রূপ কীভাবে উত্তরবঙ্গকে গ্রাস করেছিল, তা অনেকেরই জানা। তবে সেই ধ্বংসের মাঝেও শিলিগুড়ির মানুষের যে মানবিক রূপ উজ্জ্বল হয়েছিল, তা আরও একবার স্মরণ করালো সেখানকার একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ।
১৯৬৮ সালের ৪ অক্টোবর, লক্ষ্মী পূজার আগের রাতে তিস্তার ভয়ংকর তাণ্ডব দেখেছিল কার্যত গোটা উত্তরবঙ্গ। শিলিগুড়ি ক্যানভাসের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী, সে বছর একটানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। তিস্তা নদীর সেই আকস্মিক তাণ্ডবে জলপাইগুড়ি, বার্নিশ, ময়নাগুড়ি, দোমোহনি-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায়।
জানা যায়, লক্ষ্মী পুজোর আগের রাতে উত্তাল তিস্তার জলে ভেসে গিয়েছিল একের পর এক গ্রাম। ভেসেছিল ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গবাদিপশু। পরদিন সকালে সূর্য ওঠার পরেও সেই ধ্বংসের ছবি বদলায়নি। ভয়াবহ বন্যায় সহায়-সম্বল হারিয়ে বহু মানুষ রাস্তায় উঠে এসেছিলেন, উঠেছিল স্বজন হারানোর মর্মস্পর্শী আর্তনাদ। ৫৭ বছর পরেও সেই স্মৃতি উত্তরবঙ্গের প্রবীণ নাগরিকদের হৃদয়ে দগদগে।
তবে, সেই ভয়ংকর বিপর্যয়ের মাঝেও শিলিগুড়ি হয়ে উঠেছিল উত্তরবঙ্গের মানবিক মুখ। দুর্যোগের খবর পেতেই শিলিগুড়ির বাসিন্দারা ঘরে বসে না থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্তদের বাঁচাতে।
কেউ নৌকা নিয়ে, কেউ আবার ট্রাকে করে ওষুধ-সহ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিলেন দুর্গতদের কাছে।
শিলিগুড়ির মানুষ কার্যত নিজেদের জীবন উপেক্ষা করে তিস্তার ভয়ঙ্কর জলরাশির মধ্যেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
যে সময়ে বাংলার অন্য প্রান্ত থেকে মানুষ দূর থেকে কেবল প্রার্থনা করছিলেন, ঠিক সেই পরিস্থিতিতে একেবারে ময়দানে নেমে শিলিগুড়িবাসী জীবন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমান সময়ে উত্তরবঙ্গে যখন ফের একই বিপর্যয় নেমে এসেছে, তখন সেই পুরনো ইতিহাস আর শিলিগুড়ির মানুষের সেই মানবিকতাই যেন আরেকবার সামনে চলে এল।