‘আর বিশ্বাস করি না!’ বানারহাটে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে হাতে-নাতে প্রমাণ সহ অভিযোগ, কেন ক্ষুব্ধ জ্যোতির্ময় কলোনির বাসিন্দারা?

উত্তরবঙ্গের বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এবার সরাসরি ক্ষোভের মুখে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বানারহাটের গয়েরকাটা এলাকার জ্যোতির্ময় কলোনির বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনে এসে তাঁকে হাতে-হাতে ‘নালিশ চিঠি’ তুলে দিলেন। তাদের অভিযোগ, সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণেই প্রতি বছর তাদের জীবন জলমগ্ন হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে বাগডোগরায় নামার পর মুখ্যমন্ত্রী যখন পুলিশি নিরাপত্তায় ঘেরা কনভয় নিয়ে জ্যোতির্ময় কলোনি পেরোচ্ছিলেন, তখনই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা জড়ো হন। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি আসতেই অনেকে হাত নেড়ে থামার অনুরোধ করেন, কেউ আবার গাড়ির গতি কমতেই দৌড়ে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে চিঠি ধরিয়ে দেন।
চিঠিতে প্রধান অভিযোগ বানারহাট সেচ দপ্তরের এসডিওর বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রশাসনিক প্রতিশ্রুতি বারবার এলেও কাজের বালাই নেই। তাই ওই আধিকারিকের প্রতি তাঁরা বিশ্বাস হারিয়েছেন।
জ্যোতির্ময় কলোনির বাসিন্দাদের মূল সমস্যা আংরাভাসা নদীর জল। প্রতি বর্ষাতেই এই নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠে ঘরবাড়ি তলিয়ে দেয়, এবং তাদের জীবন কাটে হাঁটু জলে। বহুবার সেচ দপ্তরের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো সুরাহা মেলেনি।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীর ওপর বোল্ডার দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে আবেদন জানানো হলে আধিকারিকরা পরিদর্শনে এসে এক মাসের মধ্যে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু মাস কেটে গেলেও সেই কাজ শুরু হয়নি।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গ্রামবাসীরা কেবল অভিযোগ জানিয়েই ক্ষান্ত হননি। তাঁরা সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত প্রতিশ্রুতির ‘রিসিভ কপি’ও নালিশ চিঠির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। তাঁদের সাফ বক্তব্য, “আমরা আর বিশ্বাস করি না ওই আধিকারিককে। এখন আমাদের মুখ্যমন্ত্রীই একমাত্র ভরসা।”
জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের তরফে এই গুরুত্বপূর্ণ চিঠি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বানারহাটে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এমন দৃশ্য নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনকে কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন, সেই দিকেই তাকিয়ে জ্যোতির্ময় কলোনির ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।