নাগরাকাটা কাণ্ড: মোদী VS মমতা তুঙ্গে, খগেনকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল লড়াই

জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের ওপর হামলার ঘটনা ঘিরে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা। দার্জিলিংয়ের ভয়াবহ ধস ও বন্যার আবহে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজিরবিহীন ‘এক্স যুদ্ধ’-এ (সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ) নেমে পড়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর তীব্র তোপ

হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রথমে ইংরেজি ও পরে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “বন্যা ও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আমাদের দলের বিধায়ক, সাংসদরা যে নৃশংস আক্রমণের শিকার হয়েছে, তা মর্মান্তিক এবং নিন্দনীয়। এই ঘটনা তৃণমূলের অমানবিকতা এবং রাজ্যের শোচনীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরছে।” তাঁর আর্জি, এই কঠিন সময়ে তৃণমূল হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে মনোযোগী হোক। একইসঙ্গে তিনি বিজেপি কর্মীদের উদ্ধার কাজে পাশে থাকার আহ্বান জানান।

মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা জবাব: ‘সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্য’

প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সামনে রেখে রাজনীতি করছেন এবং কোনো প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়াই সরাসরি তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করেছেন। এটিকে তিনি ‘সাংবিধানিক নীতির লঙ্ঘন’ বলেও অভিহিত করেন।

তীব্র আক্রমণ করে মমতা লেখেন, “যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে জাতি হিংসা শুরু হবার ৯৬৪ দিন পরে সেখানে যাওয়ার অবকাশ পেয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বাংলার জন্য এই সহসা উদ্বেগ কোনও সমবেদনার পরিচয় নয়। বরঞ্চ, এটাকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্যের মতো মনে হচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর কড়া বার্তা: “এটা রাজনৈতিক বুক-চাপড়ানোর সময় নয়। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল BJP-র নন। আপনার দায়িত্ব দেশ-নির্মাণ, কাহিনি নির্মাণ নয়।” নাগরাকাটার ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ত্রাণকাজে পুলিশ-প্রশাসন ব্যস্ত থাকার সময় বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়েছিলেন।

ঠিক কী ঘটেছিল?

বন্যা কবলিত নাগরাকাটার বামনডাঙায় ত্রাণের সামগ্রী বিলি করতে গিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অভিযোগ, সেখানেই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। ঢিল ও জুতো ছোঁড়ার পাশাপাশি খগেন মুর্মুর ওপর বাটাম নিয়ে হামলা করা হয়। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘দিদির সৈনিক’ বলে পরিচিত কিছু লোক এই হামলা চালায়। পাথরের আঘাতে খগেন মুর্মু রক্তাক্ত হন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সব হারানো মানুষের ক্ষোভ থাকতেই পারে এবং সে এলাকায় ৩০-৪০টি গাড়ির বহর নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।

উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার এই ভার্চুয়াল সংঘাত নিঃসন্দেহে ভোটের আগে বাংলার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল।