উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ, নিখোঁজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিমাদ্রি, টেন্ট ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত পরিজন

বন্যা বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন পর্যটক ও কাজে যাওয়া মানুষজন। এই চরম দুর্যোগের পরিস্থিতিতে দার্জিলিংয়ে কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার এলাকার যুবক হিমাদ্রি পুরকাইত। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সেখানে আটকে পড়েছেন হুগলির বৈদ্যবাটির দুই পরিবার। প্রিয়জনের জন্য দুশ্চিন্তার ছাপ পরিজনদের চোখেমুখে, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হিমাদ্রির বাবা-মা।
নিখোঁজ হিমাদ্রি: ‘শনিবার রাত ১০টার পর আর যোগাযোগ নেই’
ডায়মন্ডহারবারের পারুলিয়া কোস্টাল থানার অন্তর্গত কামারপোল এলাকার বাসিন্দা ২৫ বছরের হিমাদ্রি পুরকাইত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ট্যুর গাইড বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তিনি প্রায়শই পাহাড়ি এলাকায় কাজ করতে যেতেন। পুজোর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি দার্জিলিংয়ের সুখিয়াপোখরিতে ভ্রমণকারী দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে যান।
হিমাদ্রির বাবা প্রশান্ত পুরকাইত ও মা শুক্লা পুরকাইত জানিয়েছেন, “রোজ ফোন করত ছেলে। শনিবার রাত ১০টাতেও তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। বলল, শুয়ে পড়েছি। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, বিদ্যুৎ থাকবে না। রবিবার সকাল থেকে ফোনে পাচ্ছি না।”
সুখিয়াপোখরি থানার পুলিশ হিমাদ্রির বাবা-মাকে জানিয়েছে যে, প্রবল বৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যায় হিমাদ্রিদের টেন্টটি ভেসে যেতে পারে। এই খবর জানার পর আরও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁর বাবা-মা।
হিমাদ্রিকে ফেরাতে আসরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
নিখোঁজ যুবককে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হিমাদ্রির বাড়িতে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। ডায়মন্ডহারবার বিধানসভা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শামিম আহমেদ হিমাদ্রির বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে আশ্বাস দেন যে, নিখোঁজ যুবককে বাড়ি ফেরানোর জন্য সাংসদের নির্দেশে সবরকম চেষ্টা শুরু হয়েছে।
ডায়মন্ডহারবারের মহকুমাশাসক অঞ্জন ঘোষ জানান, নিখোঁজ যুবকের যাবতীয় তথ্য ও ছবি দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
হুগলির ২ পরিবার পাহাড়ে আটকে: ‘ভয়ঙ্কর অবস্থা’
অন্যদিকে, হুগলির বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিয়োগী পরিবার উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন। বৈদ্যবাটী পুরসভার বাসিন্দা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্ত্রী ও পুত্র-সহ এবং স্নেহাশিস নিয়োগী তাঁর স্ত্রী ও কন্যা-সহ মোট ছয়জন এখন সেখানে আটকে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ তারিখ সন্ধ্যায় কাগেতে পৌঁছনোর সময় থেকেই দুর্যোগ শুরু হয়। রাত দশটার পর সেই দুর্যোগ ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ঋষি খোলা নদীর জল ফুলে ফেঁপে ওঠে। ভয়ে তাঁরা সকলে মিলে একটি ঘরে রাত কাটান। সোমবার সকালে উঠে দেখেন চারিদিক জলে ভর্তি।
আটকে পড়া পর্যটক জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে জানান, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় বৃষ্টি পড়ছিল, পাহাড় ধসে যাচ্ছিল সেই অভিজ্ঞতার কথাই দাদা ফোনে বলেছে। চতুর্দিকে জল ও অন্ধকার ঘিরে ছিল।” ১৮ বছর ধরে পাহাড়ে গেলেও, এবারের অভিজ্ঞতা ভোলার নয় বলে জানিয়েছেন জয়ন্তবাবু। পরিবারের সদস্যরা চায়, যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ ভাবে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসুক।