ট্রাম্পকে উপহার পাকিস্তানের, গোপনে আমেরিকাকে ‘বিশেষ উপহার’ শেহবাজের

পাকিস্তানের অর্থনীতিতে চরম দুর্দশা। ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে নাভিশ্বাস উঠছে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং আর্মি চিফ অসীম মুনির-এর। এই পরিস্থিতিতে, আমেরিকার শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের দেশের বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ বিক্রি করার এক বড় এবং বিতর্কিত পদক্ষেপ নিলেন তারা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। পাকিস্তানের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার অধীনে পাকিস্তান প্রথমবারের মতো আমেরিকায় বিরল খনিজগুলির একটি শিপমেন্ট পাঠাল। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এভাবে বিদেশে বিক্রি করে দেওয়ায় তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI)-এর মতো বিরোধী দলগুলি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং এই চুক্তিকে ‘রহস্যজনক’ বলে দাবি করেছে।

কী গেল আমেরিকায়?

ডন সংবাদপত্র সূত্রে খবর, এই প্রথমবার পাকিস্তান থেকে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান খনিজ। এর মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যান্টিমনি (Antimony)
  • কপার কনসেনট্রেট (Copper Concentrate)
  • এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ রেয়ার আর্থ মিনারেল (Rare Earth Mineral) যেমন— নিওডাইমিয়ামপ্রসেওডাইমিয়াম

এই বিরল খনিজগুলি মূলত আধুনিক প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির মতো ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি, কেন এত বিতর্ক?

পাকিস্তানের সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ফ্রন্টায়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (FWO)-এর সাথে আমেরিকার ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মিনারেলস (US Strategic Minerals)-এর একটি সমঝোতা চুক্তি (MOU) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এই চুক্তির মাধ্যমে, আমেরিকার সংস্থাটি পাকিস্তানে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪২০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করতে চলেছে। তাদের লক্ষ্য পাকিস্তানে খনিজ প্রক্রিয়াকরণের গতি বাড়ানো। যদিও এই বিনিয়োগের বিপরীতে দেশের মূল্যবান সম্পদ এভাবে তুলে দেওয়া নিয়েই যত বিতর্ক।

ভাইরাল ছবি ও ট্রাম্প কানেকশন

এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরপরই হোয়াইট হাউস থেকে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিতে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিশেষ বাক্সের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও আর্মি চিফ অসীম মুনির তাঁকে কিছু বোঝাচ্ছেন।

বিরোধীদের মতে, এই ছবিটিই প্রমাণ করে কীভাবে পাকিস্তানের ঋণগ্রস্ত সরকার নিজেদের আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলায় আমেরিকার তৎকালীন প্রশাসনের কাছে ‘উপহার’ হিসেবে এই বিরল খনিজ তুলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে নমুনা পাঠানোর পর, এবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বিরল খনিজ রপ্তানি, যা আগামী দিনেও চলতে থাকবে বলে জানা গিয়েছে।

দেশের স্বার্থে এই পদক্ষেপ কতটা লাভজনক হবে, নাকি ঋণের ফাঁদে পড়ে দেশের সম্পদ বিক্রি হচ্ছে— সেই প্রশ্ন এখন গোটা পাকিস্তান জুড়ে।

Editor001
  • Editor001