‘সনাতনের অবমাননা সহ্য করবে না’ স্লোগান! প্রধান বিচারপতিকে জুতো ছুঁড়লেন আইনজীবী, বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার কড়া পদক্ষেপ

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আজ এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল, যা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে। শুনানি চলাকালীনই ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই-কে (Chief Justice BR Gavai) লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়া হয়। তবে এই ঘটনার পরও তাঁর প্রতিক্রিয়া আজ দেশের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।
হামলায় নির্বিকার সিজেআই: “আমি প্রভাবিত হই না”
আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টে দিনের প্রথম মামলার শুনানি শুরু হওয়ার পরই এক প্রবীণ ব্যক্তি বিচারপতি গাভাইকে লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়েন। সৌভাগ্যক্রমে, জুতোটি বেঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছয়নি। ওই ব্যক্তি ‘ভারত সনাতনের অবমাননা সহ্য করবে না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
হামলাকারীকে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করে। কিন্তু ঘটনায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে নির্বিকার থেকেই বিচারপতি গাভাই মন্তব্য করেন, “আমি এমন বিষয়ে প্রভাবিত হই না।” এরপর তিনি দ্রুত শুনানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চিফ জাস্টিস পুরো সময়টাই শান্ত ছিলেন।
অভিযুক্ত এক আইনজীবী: কারণ এখনও অস্পষ্ট
জানা গিয়েছে, জুতো ছোড়ার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রক্সিমিটি কার্ড ছিল, যা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ক্লার্কদের দেওয়া হয়। কার্ডে তাঁর নাম ছিল রাকেশ কিশোর।
রাকেশ কিশোর কী কারণে এই ঘটনা ঘটালেন, সেই উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যদিও চিফ জাস্টিস রেজিস্ট্রিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির অবমাননার জেরে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া তাঁকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করেছে।
‘আক্রমণ’ কেন? বিতর্কের কেন্দ্রে ধর্মীয় মন্তব্য
এই জুতো হামলার ঘটনা ঘটেছে চিফ জাস্টিসের ভগবান বিষ্ণু সংক্রান্ত একটি মন্তব্যের পরই। খজুরাহোর ৭ ফুট কাটা মূর্তির পুনর্নির্মাণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলা উত্থাপনের সময় তিনি বলেছিলেন, “যাও এবং দেবতার কাছে জিজ্ঞাসা কর।” এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলে।
পরবর্তীতে চিফ জাস্টিস এই বিষয়ে স্পষ্টতা দিয়ে বলেন, “আমার মন্তব্যগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আমি সব ধর্মকে সম্মান করি।”
এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা এবং শীর্ষ আইনজীবী কপিল সিবাল উভয়েই মন্তব্য করেছেন যে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রায়শই অতিরঞ্জিত হয়ে যায় এবং বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অন্যদিকে, শীর্ষস্থানীয় বিচারজ্ঞ ইন্দিরা জয়সিং এই ঘটনাকে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি এক স্পষ্ট জাতিগত আক্রমণ বলে উল্লেখ করে দ্রুত তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।