এএফসি-তে ম্যাচ খেলতে ইরান যাত্রা বাতিল! ক্ষোভে ফুঁসছে মোহনবাগান সমর্থকরা, ‘পালানো’-র দায়ে কোন বড় শাস্তি আসছে ক্লাবের উপর?

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-টু (ACL-2) থেকে ম্যাচ খেলার জন্য ইরান সফর বাতিল করায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan Super Giant) বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে ক্লাব সমর্থকরা। শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। সমর্থকরা একবাক্যে মানছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘পালানো’-রই নামান্তর, যা ক্লাবের ঐতিহ্যের পরিপন্থী।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইরানে সেপাহান এসসি’র বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুনের ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাব ম্যানেজমেন্ট নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দলের অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলারদের যেতে না পারার অজুহাতে বাকি দলকেও সেদেশে পাঠায়নি।
কুণাল ঘোষের আত্মপক্ষ সমর্থন, কিন্তু কী সেই ‘অজ্ঞাত সমস্যা’?
ক্লাবের সহসভাপতি কুণাল ঘোষ এই সিদ্ধান্তটি কার্যকরী কমিটির ছিল না বলে দাবি করে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ‘কোনো একটা সমস্যা চলছে’, যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেই অজ্ঞাত সমস্যাটি কী, এবং কেন ক্লাব এ বিষয়ে মৌনতা অবলম্বন করে রয়েছে—তা নিয়েই ক্লাবজুড়ে হতাশা ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের বৈঠকে ক্লাবের প্রতিনিধিরা কী ভূমিকা রাখছেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
মোহনবাগানের উপর কঠোর শাস্তির আশঙ্কা
মহাদেশীয় স্তরে মাঝপথে এভাবে রণে ভঙ্গ দেওয়া মোহনবাগানের জন্য নতুন নয়। গত বছরও ট্র্যাক্টর এফসি’র বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার ব্যাপারে তারা একই পথে হেঁটেছিল। তবে সেবার ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তাদের যুক্তি কিছুটা মান্যতা পেয়েছিল এবং শাস্তি বিশেষ পেতে হয়নি। কিন্তু এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে উপযুক্ত সদুত্তর না থাকায় শাস্তির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এএফসি সূত্র বলছে, নিরাপত্তা ইস্যুতে ম্যাচ খেলতে না যাওয়ায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের উপর বড় শাস্তি আসতে পারে। এশিয়া ফুটবলের গভর্নিং বডি আপাতত চলতি টুর্নামেন্ট থেকে মোহনবাগানকে নাম প্রত্যাহারকারী দল হিসেবে গণ্য করেছে। ‘অপরাধের’ গুরুত্ব পর্যালোচনা করে মোহনবাগানকে টুর্নামেন্ট থেকে সাময়িক ব্যান (Ban) করার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, টানা দ্বিতীয়বার মোহনবাগানের এমন সিদ্ধান্তে আগামীতে ভারতীয় ক্লাবগুলো ACL-2’য়ে সরাসরি খেলার সুযোগ হারাতে পারে, যা ভারতীয় ফুটবলের জন্য বিরাট ক্ষতি।
প্রতিবেশী ক্লাবের তীব্র কটাক্ষ
মোহনবাগানের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবেশী ক্লাব ইস্টবেঙ্গল সরাসরি কটাক্ষ করেছে। ইস্টবেঙ্গল সচিব রূপক সাহা বলেন, “কোনও টুর্নামেন্টে না-খেলার কথা আমাদের ক্লাব ভাবতে পারে না। যা শক্তি আছে তা নিয়েই লড়াই ছুড়ে দেওয়ার লক্ষ্য থাকে আমাদের। দেশ এবং দেশের বাইরে লড়াইয়ের নাম ইস্টবেঙ্গল। অন্য ক্লাব কী করল তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। ঘামাতেও চাই না।”
এদিকে, সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছেন—কেন শুধু ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে দলকে ইরানে খেলতে পাঠানো হলো না? এই চাপের মুখে ফুটবলাররা সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেও সমর্থকদের ক্ষোভ কমছে না। প্রাক্তন ফুটবলার রহিম নবি এবং মেহতাব হোসেন যদিও ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেছেন।
Tools