রাষ্ট্রসঙ্ঘে গর্জন রাশিয়ার! ইজরায়েলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ লাভরভের, ‘মধ্যপ্রাচ্যকে উড়িয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা তেল আবিবের

নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের (UNGA) ৮০তম অধিবেশন থেকে বিশ্বকে একাধিক কড়া বার্তা দিলেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) লাভরভ একদিকে যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য শর্তসাপেক্ষে আলোচনার প্রস্তুতি জানালেন, তেমনই মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সরাসরি ইজরায়েলকে দায়ী করলেন। তিনি ইরান ও প্যালেস্তাইন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলির ভূমিকা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন।
ইউক্রেন সংঘাত: আলোচনার জন্য প্রস্তুত রাশিয়া, কিন্তু শর্ত কী?
বিদেশমন্ত্রী লাভরভ তাঁর বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার যেমন জোর দিয়েছেন, রাশিয়া এই সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর করার জন্য আলোচনার জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিল এবং আছে। তবে, যেকোনো নিষ্পত্তির আগে মস্কোর কয়েকটি মূল দাবি মেটাতে হবে:
১. রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং অত্যাবশ্যক স্বার্থ নির্ভরযোগ্যভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
২. কিয়েভ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলিতে রাশিয়ান এবং রুশভাষী জনগণের অধিকার সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
এই শর্তগুলির ভিত্তিতেই ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে আলোচনা করতে মস্কো প্রস্তুত বলে জানান লাভরভ। তিনি পশ্চিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলি মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগগুলিকে বরাবর উপেক্ষা করেছে এবং পূর্বের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে ন্যাটোর সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। তিনি সতর্ক করে দেন, “আমার দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়া হবে। ন্যাটো এবং ইইউ-এর এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়।”
ইজরায়েলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ
মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে লাভরভ সরাসরি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, তেল আবিব মধ্যপ্রাচ্যকে “উড়িয়ে দেওয়ার” চেষ্টা করছে।
তিনি ইজরায়েলের পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার আহ্বানের বিরোধিতা করেন।
৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার নিন্দা করার পাশাপাশি তিনি বলেন, এরপর থেকে “প্যালেস্তাইনিদের নৃশংস হত্যার কোনও যুক্তি নেই”।
ইরান ও কাতারে ইজরায়েলের সাম্প্রতিক হামলারও কড়া নিন্দা করেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী।
প্যালেস্তাইন ও ইরান ইস্যুতে তীব্র কটাক্ষ
প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলির (ফ্রান্স, ব্রিটেন সহ) দেরিতে নেওয়া সিদ্ধান্তকে উপহাস করেন লাভরভ।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তাদের এত সময় লাগল কেন?”
তাঁর কটাক্ষ, সাধারণ পরিষদ পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারা হয়তো আশা করেছিল যে ইজরায়েল তার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ায় “স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছুই এবং কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে দেশগুলো এখন প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিচ্ছে, তারা অনেক দেরিতে কাজ করছে।
অন্যদিকে, ইরানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে লাভরভ বলেন, তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পশ্চিমা প্রচেষ্টা “অবৈধ”। তিনি চিন ও রাশিয়ার ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পশ্চিমা প্রচেষ্টারও তীব্র সমালোচনা করেন।