ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে নয়া মাইলফলক, শিগ্রই মহাকাশে যাবে ব্যোমমিত্র

ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি এক নতুন দিগন্ত ছুঁতে চলেছে। গগনযান অভিযানের জন্য ইসরো (ISRO) ব্যোমমিত্র নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত (AI) মানবিক রোবট তৈরি করেছে। সংস্কৃত শব্দ “ব্যোম” (আকাশ) এবং “মিত্র” (বন্ধু) থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে মানবহীন গগনযান G1 ক্যাপসুলে এই রোবটটিকে উৎক্ষেপণ করা হবে—যা ভারতের বৃহত্তম মহাকাশ পরীক্ষা হতে চলেছে।

ব্যোমমিত্র হল ইসরো’র ইনার্শিয়াল সিস্টেমস ইউনিট (IISU) দ্বারা তৈরি একটি আধা-মানবিক (Humanoid) রোবট। এর রোবোটিক মাথা, ধড় এবং বাহু থাকলেও কোনো পা নেই, কারণ এটিকে মাইক্রোগ্রাভিটির জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি AlSi10Mg অ্যালুমিনিয়াম খাদ দিয়ে তৈরি, যা তাপ সহ্য করতে পারে এবং এর ওজন মাত্র ৮০০ গ্রাম। হালকা এই রোবটটির ভেতরে রয়েছে উন্নত AI প্রযুক্তি। ব্যোমমিত্র ক্রু মডিউলের ডিসপ্লে পড়তে পারে, কমান্ড বুঝতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি হিন্দি এবং ইংরেজিতে কথা বলতে সক্ষম।

গগনযান G1 ফ্লাইটে ব্যোমমিত্রের মূল কাজ হবে মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করা। এটি ফ্লাইট পদ্ধতি যাচাই করবে এবং বায়ুচাপ ও তাপমাত্রা-র মতো পরিবেশগত প্যারামিটার পর্যবেক্ষণ করবে। বিশেষ সেন্সর দিয়ে সজ্জিত এই রোবট পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারে, বায়ুচাপের পরিবর্তন সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে এবং সুইচ প্যানেলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারে। এটি পৃথিবীতে মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে এবং মাইক্রোগ্রাভিটি পরীক্ষা চালাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মহাকাশ যাত্রা মানবদেহকে কীভাবে প্রভাবিত করে, সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। এই তথ্য ২০২৭ সালে প্রথম ক্রু মিশনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

ব্যোমমিত্র গগনযানের জীবন-সহায়ক এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলিকে ঝুঁকি ছাড়াই বাস্তবসম্মত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করবে। এই অভিযানটি শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত মাইলফলক নয়, এটি ভারতের মানব মহাকাশযানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।