দেবীর বোধনের আগেই সর্বনাশ! দুর্গাপূজার প্রতিমা আনতে গিয়ে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ৩ যুবক

দেবীর বোধনের প্রাক্কালে বিষাদের সুর হুগলির পোলবার অনন্তপুর গ্রামে। আসন্ন দুর্গাপূজার প্রতিমা আনতে গিয়ে ভয়ঙ্কর পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়ল একটি চারচাকা গাড়ি। আর সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিন জন, গুরুতর আহত আরও তিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ চন্দননগর রেল ফ্লাইওভার থেকে দিল্লি রোডের দিকে যাচ্ছিল চার আরোহী সমেত মোট ৬ জন সওয়ারি ওই গাড়িটি। দ্রুত গতিতে থাকা গাড়িটি হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে সারিবদ্ধভাবে রাখা ইটের স্তূপে সজোরে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের তীব্রতায় গাড়িটির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। চালক ও অন্যান্য আরোহী-সহ মোট ছয় জনই গুরুতর আহত হন।
তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি চারজনকে পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে সেখানে আরও এক জনের মৃত্যু হয়। বাকি তিনজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মৃতেরা হলেন— শঙ্করবাটির বাসিন্দা ভাস্কর দেবধারা (২৯), এবং চন্দননগরের সুরেরপুকুরের বাসিন্দা প্রীতম চক্রবর্তী (৩০) ও স্বপন দে (৪০)। মৃত ভাস্করের দাদা সোমনাথ দেব ধারা (৩১), বাউল দাস (৩০) এবং শ্যামল মাইতি (২৬) আহত অবস্থায় বর্তমানে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল ও পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গিয়েছে, শঙ্করবাটি বারোয়ারি দুর্গাপুজোর এ বার ৪৬তম বর্ষ। গতকাল রাত দশটা নাগাদ এই পুজো কমিটির সদস্যরাই চন্দননগর কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা আনতে গিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই শঙ্করবাটির করোনা স্ট্যাচু মোড়ের বাসিন্দা দুই ভাই— ভাস্কর দেব ধারা ও সোমনাথ দেব ধারা একটি চারচাকা গাড়ি নিয়ে প্রতিমা আনার কাজে যুক্ত হন। কিন্তু মন্দিরে ফেরার সময় চন্দননগর ফ্লাইওভারের নীচে শঙ্করবাটি মোড়ের কাছেই পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসাবে চালকের মত্ত থাকা এবং গাড়ির অতিরিক্ত গতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুখচাঁদ দাস জানান, গাড়ির গতিবেগ বেশি থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইটের সারিতে ধাক্কা মারে। এর ফলেই এই দুর্ঘটনা। যদিও হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি ডিএনটি প্রিয়ব্রত বক্সি জানান, গাড়ির ভেতর থেকে কোনও মদের বোতল পাওয়া যায়নি।
সুগন্ধা পঞ্চায়েতের সদস্য অজিত পাল বলেন, “পুজোর প্রতিমা আনতে গিয়েছিল ওরা। সকলে চলে এলেও বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পুলিশ ফোন করে জানালে সকলে গিয়ে দেখে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়ির গতি বেশি থাকাতেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।”
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চন্দননগর ও পোলবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুজোর আগে এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে শঙ্করবাটি ও চন্দননগরের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে।