বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় যাদবপুরের ৫০ জন গবেষক! আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের উজ্জ্বল বাংলা

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের একবার বাংলার মুখ উজ্জ্বল করল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ দুই শতাংশ বিজ্ঞানী ও গবেষকের তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে যাদবপুরের মোট ৫০ জন শিক্ষক ও গবেষক স্থান পেয়েছেন। গবেষণার মানের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি ভারতীয় শিক্ষা মহলে এক বিরাট গর্বের বিষয়।
২০২৪ সালের এককবর্ষ ভিত্তিক গবেষণা উদ্ধৃতি সংখ্যা-র উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ তালিকা। এছাড়াও, সামগ্রিক শিক্ষা জীবনের গবেষণা অবদানের ভিত্তিতে স্ট্যানফোর্ড আরও একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে যাদবপুরের ৪০ জন অধ্যাপক ও গবেষক স্থান পেয়েছেন।
যে কারণে এই সাফল্য তাৎপর্যপূর্ণ
যাদবপুরের এই সাফল্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে:
তরুণ গবেষকদের জয়: প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর অমিতাভ দত্ত জানিয়েছেন, এককবর্ষের তালিকায় বহু তরুণ গবেষক ও শিক্ষক রয়েছেন, যা প্রমাণ করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন প্রজন্ম আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করছে। তিনি বলেন, “নানা সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও আর্থিক সংকট সত্ত্বেও যাদবপুরের তরুণ গবেষকরা বিশ্বমানের গবেষণায় নিজেদের প্রমাণ করছে।”
অবসরপ্রাপ্তদের অবদান: এই তালিকায় কেবল বর্তমান অধ্যাপক নয়, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সত্যপ্রিয়া মৌলিক এবং গণিত বিভাগের কৃপাসিন্দু চৌধুরীর মতো অবসরপ্রাপ্ত গবেষকরাও তাঁদের বিশ্বব্যাপী অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।
কলা অনুষদের স্বীকৃতি: ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক রায় একমাত্র কলা অনুষদের প্রতিনিধি হিসেবে দুটি তালিকাতেই নাম তুলেছেন। বিজ্ঞান থেকে কলা— গবেষণার এই বহুমুখীতাই প্রতিফলিত হয়েছে স্ট্যানফোর্ড তালিকায়।
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অদম্য লড়াই
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হল নিজস্ব গবেষণা ফেলোশিপের অভাব। অন্যান্য প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের মতো এখানে কোনো ইনস্টিটিউট ফেলোশিপ নেই। তা সত্ত্বেও গবেষকরা যে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করছেন, এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তারই প্রতিফলন।
এই সম্মানকে একজন বিজ্ঞানী বা গবেষকের কাছে ‘সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তরিত রায় চৌধুরী, যাঁর নামও তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, “এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান। এই স্বীকৃতি আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করবে।”
শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সাফল্য প্রমাণ করে যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার ক্ষেত্রেও সমানভাবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, যা ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে তার ধারাবাহিকতাকে আরও মজবুত করল।