সিকিমে পর্যটকদের জন্য খুলছে ডোকলাম ও চো লা! ১ অক্টোবর থেকে ‘রণভূমি’ ভ্রমণে কড়া নিয়ম, খুশি পর্যটন মহল

পর্যটনমহলের জন্য সুখবর! পুজোর আগেই সিকিমে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র— ডোকলাম ও চো লা— পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। ২৭ সেপ্টেম্বর খোলার কথা থাকলেও প্রশাসনিক কারণে তা পিছিয়ে ১ অক্টোবর করা হয়েছে। যদিও লাচেনে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারিই থাকছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রণভূমি পর্যটন বা ব্যাটেলফিল্ড ট্যুরিজমের কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই নির্দেশ মেনেই ইন্দো-চিন সীমান্ত সংলগ্ন এই দুটি পর্যটন কেন্দ্র কেবলমাত্র দেশীয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সিকিমের পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব সি শুভাকর রাও জানিয়েছেন, “কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে ইতিমধ্যে চো লা ও ডোকলামে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেকদিন দুটি জায়গায় ২৫টি করে গাড়িকে অনুমতি দেওয়া হবে।”
তিনি জানান, সিকিমে নাথু লা, চো লা ও ডোকলাম— এই তিনটি যুদ্ধক্ষেত্র রয়েছে। ভারতীয় সেনা, বিআরও (BRO) এবং পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পরই দুটি পর্যটন কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডোকলাম: গ্যাংটক থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩,৭৮০ ফুট উচ্চতায় থাকা ডোকলাম হলো ভুটান, চিন ও ভারতের ত্রিসীমান্তের চুম্বি উপত্যকা। ২০১৭ সালে চিন রাস্তা নির্মাণ শুরু করলে ভারতীয় সেনারা হস্তক্ষেপ করে, যার জেরে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা চলেছিল।
চো লা: অন্যদিকে, চো লা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭,৭৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। নাথু লা ও চো লা-তে ১৯৬৭ সালে ভারত-চিন সেনাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। নাথু লা ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ডোকলাম ও চো লা-তে সেনাদের সহযোগিতায় ক্যাফেটেরিয়া, শৌচাগার, পার্কিং ও অন্যান্য পর্যটন সুবিধা তৈরি হচ্ছে। উচ্চতাজনিত কারণে যাতে শারীরিক সমস্যা না হয়, সেজন্য চিকিৎসায় সেনার সাহায্যও নেওয়া হবে।
পর্যটকদের অবশ্যই একাধিক কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে, যা নিরাপত্তার স্বার্থে আরোপ করা হয়েছে:
১. পারমিট: পর্যটকদের সিকিম পর্যটন দফতর থেকে পারমিট নিতে হবে।
২. হোম স্টে বুকিং: সংশ্লিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রের কাছে (কুপুপ, নাঙথাং, জুলুক ও পদমচেন) অনুমোদিত হোম স্টের একরাতের অগ্রিম বুকিং থাকতে হবে।
৩. খরচ: মাথাপিছু ১১২০ টাকা ধার্য্য করা হয়েছে, তবে কোনো পার্কিং ফি লাগবে না।
৪. গাড়ির অনুমোদন: শুধুমাত্র ট্যুর অপারেটর ও সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সির গাড়িকে পারমিট দেওয়া হবে। কোনো প্রাইভেট গাড়িকে পারমিট দেওয়া হবে না।
৫. বাইক: ২৫টি গাড়ির পাশাপাশি ২৫টি করে বাইকের অনুমোদনও দেওয়া হবে। তবে পাহাড়ি রাস্তার জন্য শুধুমাত্র ১৪০০ সিসির উপরের বাইককেই পারমিট দেওয়া হবে।
৬. ট্যুর প্যাকেজ: জেড ক্যাটাগরির গাড়ির ক্ষেত্রে দু’দিনের জন্য পারমিট বাবদ ১২ হাজার ও জে ক্যাটাগরির গাড়ির ক্ষেত্রে ১১ হাজার টাকা ধার্য্য করা হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক চেকপোস্টে সিকিম পুলিশের ১৭ মাউন্টেন ব্যাটেলিয়নের জওয়ান মোতায়েন রাখা হবে এবং কুপুপ পাস থেকেই পুলিশ পর্যটকদের এসকর্ট করে নিয়ে যাবে।