H-1B ভিসার ফি ১ লক্ষ ডলার! ভারতীয় পেশাদারদের ওপর প্রভাব ফেলবে ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

H-1B ভিসা প্রোগ্রামে ব্যাপক পরিবর্তন আনার একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, যা কার্যত ভিসা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বদলে দেবে। বর্তমানের লটারি ব্যবস্থার বদলে এখন থেকে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের অগ্রাধিকার দিতে ‘ওয়েটেড সিলেকশন প্রসেস’ কার্যকর করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি এসেছে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সাম্প্রতিক আদেশের ঠিক পরেই, যেখানে নতুন প্রতিটি H-1B ভিসার আবেদনের জন্য ১ লক্ষ ডলার ফি নেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো আমেরিকান কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার বন্ধ করা।

‘ওয়েটেড সিলেকশন প্রসেস’ কী?

H-1B ভিসা প্রোগ্রামের অধীনে আমেরিকান কোম্পানিগুলো আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ করে। বর্তমানে সীমিত কোটার কারণে লটারির মাধ্যমে আবেদনকারীদের নির্বাচন করা হয়। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে বেতন-ভিত্তিক ‘ওয়েটেড সিলেকশন’ পদ্ধতি চালু হবে। এতে চারটি বেতন স্তরের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। সর্বোচ্চ বেতন (বার্ষিক ১,৬২,৫২৮ ডলার) পাওয়া আবেদনকারীরা নির্বাচন পুলে চারবার সুযোগ পাবেন, আর নিম্ন স্তরের আবেদনকারীরা পাবেন মাত্র একবার। এর ফলে প্রবীণ এবং উচ্চ বেতনভোগী কর্মীদের অগ্রাধিকার মিলবে, যা নতুন স্নাতক এবং জুনিয়র কর্মীদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

ম্যানিফেস্ট ল’র প্রধান ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি নিকোল গুনারা বলেছেন, “এই পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে আসা প্রতিভাদের আমেরিকান অর্থনীতিতে ভূমিকা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। যেমন, মেটার মতো কোম্পানিতে ১,৫০,০০০ ডলার বেতন পাওয়া একজন ইঞ্জিনিয়ার অনেকবার এন্ট্রি পাবেন, যেখানে একটি স্টার্টআপ কোম্পানির ৭০,০০০ ডলার বেতন পাওয়া জুনিয়র ডেভেলপার মাত্র একবারই সুযোগ পাবেন।” তার মতে, এর ফলে বড় এবং প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে, আর নতুন কোম্পানিগুলো তরুণ প্রতিভা নিয়োগে বঞ্চিত হতে পারে। এর ফলে আমেরিকান টেক কর্মক্ষেত্র আরও প্রবীণ এবং উচ্চ বেতনভোগী কর্মীদের দিকে সরে যাবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স বলেছেন যে, ১ লক্ষ ডলারের এই জরিমানা কোম্পানিগুলোকে সিস্টেমের ‘স্প্যামিং’ করা এবং বেতন কমানো থেকে বিরত রাখবে, পাশাপাশি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দেবে। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জোর দিয়ে বলেন, “উদ্দেশ্য আমেরিকান কর্মীদের নিয়োগকে উৎসাহিত করা।” হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি উইল শার্ফ H-1B-কে আমেরিকার “সবচেয়ে বেশি অপব্যবহৃত ভিসা সিস্টেম” বলে অভিহিত করেছেন।

ভারতীয় পেশাদারদের ওপর বেশি প্রভাব:

এই পরিবর্তন ভারতীয় পেশাদারদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদিত H-1B আবেদনকারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশই ভারতীয় নাগরিক। টিসিএস, ইনফোসিস এবং উইপ্রোর মতো ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলো এই ভিসার ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। নতুন ফি এই সংস্থাগুলোর জন্য বড় চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা নিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বা চাকরির সুযোগ ভারতে ফিরিয়ে আনতে পারে। কাকতালীয়ভাবে, এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিউইয়র্কে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গেছেন। এই বৈঠকের সময়েই ট্রাম্প আবার ঘোষণা করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামিয়েছিলেন, যদিও ভারত সরকার আজও এই দাবির বিরোধিতা করে।