৩৯ হাজার অলিম্পিক সুইমিং পুলের সমান জল নেমে এল এক মুহূর্তে! তাইওয়ানে টাইফুন রাগাছার তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

তাইওয়ানের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হুয়ালিয়েনে সুপার টাইফুন রাগাছার প্রভাবে সৃষ্ট ভয়ংকর বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার দেশটির অগ্নিনির্বাপক দফতর জানিয়েছে, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১২৪ জন এখনো নিখোঁজ।
এই বিধ্বংসী ঘটনাটি ঘটে যখন পাহাড়ে টানা প্রবল বৃষ্টির কারণে একটি কৃত্রিম হ্রদের বাঁধ ভেঙে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে বাঁধ ভাঙার পর বিশাল জলরাশি সুনামির মতো ধেয়ে আসে এবং মুহূর্তে কাছাকাছি গুয়াংফু শহরে ঢুকে পড়ে।
এক স্থানীয় পোস্টম্যান জানান, পানির ঢেউ এতটাই দ্রুত ছিল যে তা সুনামির মতো মনে হচ্ছিল। তিনি দ্রুত পোস্ট অফিসের দোতলায় উঠে প্রাণ বাঁচান। পরে যখন তিনি নিজের বাড়িতে পৌঁছান, তখন দেখেন যে তার গাড়িটি ভেসে এসে লিভিং রুমে ঢুকে গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিরা সবাই গুয়াংফু শহরের বাসিন্দা। বন্যার তোড়ে শহরের একটি বড় নদীর ওপরের সেতুও সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।
একটি গ্রামের প্রধান ওয়াং ত্সে-এন জানান, তার গ্রামের প্রায় ১,০০০ বাসিন্দা বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন। তিনি বলেন, “এখন সব কিছু এলোমেলো। চারিদিকে শুধু কাদা আর পাথর। আমাদের প্রথম কাজ হলো সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, কারণ ত্রাণ সামগ্রীও আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।”
পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে তাইওয়ানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধারকারী দল হুয়ালিয়েনে পাঠানো হয়েছে। সেনাবাহিনীও সহায়তার জন্য ৩৪০ জন সেনাসদস্য মোতায়েন করেছে। সেনারা সাঁজোয়া গাড়িতে করে কাদা মাখা রাস্তায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যে বাঁধটি ভেঙেছে, সেই হ্রদে প্রায় ৯.১ কোটি টন জল ছিল, যা প্রায় ৩৬,০০০ অলিম্পিক সাইজের সুইমিং পুলের সমান। বাঁধ ভাঙার পর প্রায় ৬ কোটি টন জল একসঙ্গে বেরিয়ে আসে।
এদিকে, এই দুর্যোগে চীনও তাইওয়ানের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্কের কারণে একটি বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তাইওয়ানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর সুপার টাইফুন রাগাছা এখন চীনের দক্ষিণ উপকূল এবং হংকংয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।