দুর্গাপূজায় দেশমাতৃকা! ২৫০ বছর ধরে এই বনেদি বাড়িতে এভাবেই পূজিত হন মা দুর্গা

পুজো মানেই বাঙালির কাছে এক আবেগ। তবে, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু রাজনৈতিক ইতিহাসও। পরাধীন ভারতে যখন স্বদেশী আন্দোলন তুঙ্গে, তখন দুর্গাপূজা হয়ে উঠেছিল দেশপ্রেমের এক অন্যতম মাধ্যম। মা দুর্গা তখন শুধু দেবী নন, তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশমাতৃকা বা দেশমাতা। কলকাতার হাটখোলার দত্তবাড়ির পুজোয় আজও সেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। ১৭৯৪ সালে শুরু হওয়া এই পুজো আজ ২৩০ বছর ধরে একইভাবে পালিত হয়ে আসছে।
ইংরাজদের যুগে শুরু এই পুজো
১৭৯৪ সালে এই পুজোর সূচনা করেন জগৎরাম দত্ত। তখন বাংলায় স্বাধীন নবাবের পতন হয়েছে এবং ইংরেজরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে। জগৎরাম দত্ত ছিলেন কোম্পানির পাটনা শাখার দেওয়ান। সাহেবদের সঙ্গে কাজ করলেও তিনি নিজের বাঙালিয়ানা ধরে রেখেছিলেন। তাই বাড়িতেই শুরু করেন দুর্গাপূজা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই বাড়িতে মা পূজিত হয়ে আসছেন।
সাবেকিয়ানা ও দেশপ্রেমের মেলবন্ধন
এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হলো মায়ের ডাকের সাজ। তাঁর বাহন সিংহ ঘোটকমুখী, যা অন্যান্য পুজোর থেকে আলাদা। এছাড়াও, মায়ের গয়না মঠচৌরি শৈলীতে নির্মিত হয়, যেখানে কৃষ্ণ ও চণ্ডীর কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই পুজোর আরেকটি বিশেষত্ব হলো, মায়ের ভোগে অন্ন দেওয়া হয় না। পরিবর্তে, নানা ধরনের মিষ্টি ও ভাজা নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়।
সবথেকে আকর্ষণীয় হলো পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্বদেশী আমলের ঐতিহ্য। একবার বিসর্জন শেষে পরিবারের এক পূর্বপুরুষ গেয়ে উঠেছিলেন, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’। সেই থেকে আজও বিসর্জন শেষে বাড়ির ছেলেরা সমবেত কণ্ঠে এই গান গেয়ে থাকেন। এ যেন শুধু একটি গান নয়, বরং দেশপ্রেম আর ঐতিহ্যের এক সুন্দর মেলবন্ধন, যা আজও এই পুজোকে বিশেষ করে তুলেছে।
আর মাত্র কয়েক দিন বাকি মহালয়ার, তারপরই শুরু হয়ে যাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। এই বছর মাসের শেষে পুজো পড়লেও বাঙালির উৎসাহে কোনো কমতি নেই। থিম থেকে সাবেকি, সব ধরনের পুজোতেই সমান উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। তবে উত্তর কলকাতার দত্তবাড়ির মতো কিছু বনেদি বাড়ি আজও তাদের ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে ধরে রেখেছে সগৌরবে।