বিশেষ: সময়ের কাজ সময়ে করেনা কারা?–কোন ধরনের মানুষ কেন কাজ ফেলে রাখে?

কাজ ফেলে রাখা বা ঢিলেমি কোনো সাধারণ অভ্যাস নয়, বরং এক ধরনের অভিশাপ। সময়ের কাজ সময়ে না করার এই প্রবণতা আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। পৃথিবীর প্রায় ২০% মানুষ এই সমস্যার শিকার।
আমাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই কঠিন কাজ এড়িয়ে চলতে চায় এবং সহজ ও উপভোগ্য কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এই কারণেই জরুরি কাজ ফেলে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া বা মজার ভিডিও দেখতে ভালো লাগে। আর এই প্রবণতা যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন তা থেকে মুক্তি পাওয়াটা শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে না।
মনোবিজ্ঞানীরা ঢিলেমি করা মানুষদের ৫টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। আপনি কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন এবং আপনার সমস্যার মূল কারণ কী, তা জানতে পারলে সমাধান করা সহজ হবে।
৫ ধরনের ঢিলেমি এবং তার কারণ
১. পারফেকশনিস্ট: এই ধরনের মানুষ সবকিছু নিখুঁতভাবে করতে চায়। তারা কোনো ভুল হওয়ার ভয়ে বা খুঁত থাকার আশঙ্কায় কাজ শুরুই করতে পারে না। তাদের ধারণা, যতক্ষণ না সব আয়োজন নিখুঁত হচ্ছে, ততক্ষণ কাজ শুরু করা অর্থহীন। কিন্তু সেই ‘নিখুঁত সময়’ কখনোই আসে না, আর তাই তারা শুধু ভাবতে ভাবতেই সময় নষ্ট করে। এর ফলে অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
২. উটপাখি: উটপাখির মতো এই মানুষগুলো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলে। তারা একটি স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে এবং মনে করে সব ঠিক হয়ে যাবে। কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার বদলে তারা দিবাস্বপ্ন দেখে। ভবিষ্যতে নিজেকে সফল কল্পনা করলেও, তা অর্জনের জন্য কোনো পরিশ্রম করতে তারা রাজি নয়।
৩. আত্মবিধ্বংসী: এই মানুষগুলো নিজেদের অগোচরে ক্ষতি ডেকে আনে। তারা কোনো কাজ না করে বসে থাকে এই ভেবে যে, এতে অন্তত ক্ষতি হবে না। তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ ফেলে রাখে, তবে সেটা ভুল করার ভয়ে নয়, বরং অতিরিক্ত গা-ছাড়া মনোভাবের কারণে। একদম শেষে গিয়ে তারা কাজ শেষ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
৪. অতি সাহসী: এদেরকে অতি আত্মবিশ্বাসীও বলা যায়। এরা ভাবে যে, জরুরি কাজটি শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না, অল্প সময়েই তারা তা করে ফেলতে পারবে। তাই বাকি সময়টা অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করে। এই ধরনের মানুষ প্রায়ই প্রতিভাবান হয়, কিন্তু তাদের অতি আত্মবিশ্বাস উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা মনে করে, ‘চাপের মুখে সবচেয়ে ভালো কাজ হয়’, আর এই ধারণাটি তাদের ঢিলেমিকে বৈধতা দেয়।
৫. প্রতারক: এরা নিজেদের মর্জিমাফিক চলতে পছন্দ করে। যখন যা ইচ্ছা হয়, তখন সেটাই করে। এদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, ‘আমার যখন সময় হবে, তখন আমি করবো।’ এই ধরনের মানুষরা নিজেদের স্বাধীনচেতা হিসেবে জাহির করে, কিন্তু আসলে তারা নিজেদের আবেগ ও ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা নিজেরা ঢিলেমি করলেও সবসময় ব্যস্ততার ভান করে দেখায় যে তারা অনেক কাজ করছে।