“দুর্নীতি, বেকারত্ব; সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা”-ওলি সরকারের বিরুদ্ধে যে সব কারণে ফুঁসছে যুব সমাজ

নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনে ইতিমধ্যে ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ২৫০ জনেরও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’-এর নির্দেশ দিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে পার্লামেন্টে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং ‘ওলির পদত্যাগ চাই’ স্লোগান তুলছে।
বিক্ষোভের আসল কারণ কি শুধুই সোশ্যাল মিডিয়া?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা এই ব্যাপক বিক্ষোভের একটি তাৎক্ষণিক কারণ মাত্র। এর আড়ালে লুকিয়ে আছে ওলি সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ। বেকারত্ব বৃদ্ধি, শিক্ষার বেহাল দশা এবং লাগাতার দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলো এই আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলেছে। এই ক্ষোভই এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে নেপালের রাজপথে।
ওলি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
চলতি বছরে ওলি সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে:
- রাজকুমার ঘুষ কেলেঙ্কারি: ভূমি কমিশনে নিয়োগের জন্য মন্ত্রী রাজকুমার গুপ্তের বিরুদ্ধে ৭৮ লক্ষ নেপালি টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যার একটি অডিও ফাঁস হয়।
- মাধব কুমার ভূমি কেলেঙ্কারি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপালসহ ৯২ জনের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের পুরোনো জমি হস্তান্তরে ১৮৫.৮৫ মিলিয়ন নেপালি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
- নেপাল টেলিকম বিলিং কেলেঙ্কারি: বর্তমান ও প্রাক্তন ১৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিলিং সিস্টেম চুক্তিতে ৩৩৪.৮ মিলিয়ন নেপালি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
- ভিজিট ভিসা কেলেঙ্কারি: ভিসা দুর্নীতি এবং চোরাচালানের অভিযোগে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসে অভিযান চালিয়ে এক যুগ্ম সচিবকে গ্রেফতার করা হয়।
- পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেলেঙ্কারি: চিনের ঋণে নির্মিত এই বিমানবন্দরে ১৪ বিলিয়ন নেপালি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, যদিও তদন্ত পরে স্থগিত হয়ে যায়।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বিরোধী দলের অবস্থান
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। পূর্ব এশিয়া ফোরামের মতে, ওলি সরকার জনগণের আস্থা হারিয়েছে। এদিকে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, সরকার এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে যেন কোনো প্রতিবাদ সংগঠিত না হতে পারে, সে জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নেপালের ভবিষ্যৎ কোন দিকে নিয়ে যায়, তা এখন দেখার বিষয়।