ফাঁসির আগে শেষ ইচ্ছা পূরণের সুযোগ কেন দেওয়া হয়? এর পিছনে রয়েছে যে ঐতিহাসিক ও মানবিক কারণ

মৃত্যুদণ্ড মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন শাস্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই শাস্তির কার্যকরের আগে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির শেষ ইচ্ছা পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়। এটি এমন একটি প্রথা যা শত শত বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু কেন এমন সুযোগ দেওয়া হয় এবং এর উৎপত্তি কোথায়?
ঐতিহাসিক ও মানবিক প্রেক্ষাপট
ইতিহাসবিদদের মতে, এই প্রথাটি ১৮শ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে এটি ইউরোপ, এশিয়া এবং ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও কোনো লিখিত আইন বা কারা ম্যানুয়ালে এর স্পষ্ট উল্লেখ নেই, তবুও এটি একটি অলিখিত মানবিক রীতি হিসেবে প্রচলিত। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর আগে কোনো মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণ না হলে তার আত্মা শান্তি পায় না। তাই মানবিকতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মিশ্রণে এই প্রথাটি সমাজে টিকে আছে।
কোন ধরনের ইচ্ছা পূরণ করা হয়?
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীর সব ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয় না। দণ্ড বাতিল বা স্থগিতের মতো অনুরোধ কখনোই মেনে নেওয়া হয় না। বরং, বাস্তবায়নযোগ্য এবং সময়োচিত ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন:
প্রিয় খাবার খাওয়া: বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, ‘লাস্ট মিল রিকোয়েস্ট’ বা শেষ খাবারের অনুরোধ বহুল প্রচলিত।
পরিবারের সঙ্গে দেখা: বন্দীর পরিবারের সঙ্গে শেষবার দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
ধর্মীয় আচার: ধর্মীয় গুরু বা পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলা, প্রার্থনা করা কিংবা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
অসম্ভব বা অতিরিক্ত সময়সাপেক্ষ অনুরোধ, যেমন দূরের আত্মীয়কে ডেকে আনা, সাধারণত বাতিল করা হয়। ভারতে ভোরবেলায় দণ্ড কার্যকর করা হয় যাতে জেলের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো বাধা না আসে।
এই প্রথার মূল লক্ষ্য হলো বন্দীর মানসিক যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমানো। এটি সমাজের একটি মানবিক প্রচেষ্টা, যা কঠিনতম শাস্তির মাঝেও সামান্য স্বস্তি ও সম্মান দেওয়ার একটি দৃষ্টান্ত।