মেট্রো পরিষেবা শুরু হতেই ফিরছে বিপর্যয়ের স্মৃতি, বউবাজারে বাসিন্দাদের মনে কম্পন

দীর্ঘ টালমাটাল পরিস্থিতি কাটিয়ে শিয়ালদা থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে মেট্রো পরিষেবা শুরু হতেই নতুন করে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বউবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের বাসিন্দাদের মধ্যে। ২০১৯ সালের সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের ক্ষত এখনও দগদগে, আর মাটির নীচ দিয়ে মেট্রো চলার ফলে যে কম্পন হচ্ছে, তা তাদের মনে নতুন করে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।

ক্ষোভ ও অভিযোগ

দুর্গাপিতুরি লেনের বাসিন্দা অমিত সেন এবং সোনার ব্যবসায়ী পরিতোষ কর্মকার উভয়েই মেট্রো কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, মেট্রোর কাজের কারণে তাদের পুরনো বাড়িতে যে ফাটল দেখা দিয়েছিল, তা আজও সারানো হয়নি। উল্টোদিকে, মেট্রো চলতে শুরু করায় বাড়ির কম্পন আরও বেড়েছে। অমিত সেন বলেন, “এসব গাফিলতি আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ছাড়া আর কিছুই নয়।” পরিতোষ কর্মকার আরও অভিযোগ করেন, মেট্রো কর্তৃপক্ষের ঠিকাদারদের কাজের মানও ভালো নয় এবং শুধু আশ্বাস দিয়েই সময় পার করা হচ্ছে।

মেট্রোর এই কম্পন শুধু বাড়ির দেওয়ালই নয়, বাসিন্দাদের হৃদয়েও কম্পন ধরিয়ে দিচ্ছে, যা তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

আর্থিক সুযোগ-সুবিধার গুঞ্জন

তবে এই পরিস্থিতির মধ্যে ভিন্ন একটি গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়দের একাংশের মধ্যে এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, কিছু লোক এই আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। তাদের মতে, যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের মতো করেই এখন জরাজীর্ণ বাড়ির মালিকরাও মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দারা মনে করছেন, বাস-ট্রামের যাতায়াতের কারণে আগে থেকেই এসব বাড়িতে কম্পন হতো, তাই নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হওয়ার কারণ নেই।

এই প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে জানান, তিনি নিজেও কম্পন অনুভব করেছেন, তবে আতঙ্কের কারণ নেই। মেট্রো কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নজরে রাখছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে যে, তারা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কম্পন ও সম্ভাব্য বিপদ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের বিপর্যয়ে ৫২টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হয়েছিল। এর মধ্যে ২৪টি বাড়ি নতুন করে তৈরির কথা ছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টির কাজ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিয়ালদা-এসপ্লানেড মেট্রো চালু হওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।