পুজোর মুখেও মুখভার তাঁতশিল্পীদের, কাজ নেই, অভাব আর হতাশার ছবি

একসময় তাঁত শিল্পের জন্য পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রামজীবনপুর আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। আধুনিক মেশিনের দাপট, মহাজনের থেকে কম মজুরি, এবং সরকারের উদাসীনতার কারণে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শত শত পরিবার চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পুজোর মুখেও তাদের মুখে হাসি নেই, কারণ কাজের অভাবে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

শিল্পের করুণ দশা

রামজীবনপুর পুরসভার ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে একসময় ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে তাঁত শিল্পের রমরমা ছিল। তাঁতিপাড়ায় সারাদিন মেশিনের ‘খটাখট’ আওয়াজ শোনা যেত। কিন্তু এখন সেই আওয়াজ প্রায় বন্ধ। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার কোনোমতে এই পেশা টিকিয়ে রেখেছে। তাঁতশিল্পীরা জানান, সুতির শাড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় মহাজনরা সুতোর জোগান বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন যারা রেশম বা সিল্কের শাড়ি তৈরি করছেন, তারা সামান্য কিছু মজুরি পাচ্ছেন, কিন্তু তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

নতুন প্রজন্মের অনীহা

এই শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন কারণ নতুন প্রজন্ম এই কাজে আগ্রহী নয়। শিল্পী বংশী দাস জানান, ‘পেটের তাগিদে, রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে অনেকেই। সরকার থেকে বহুবার ডকুমেন্টস নিয়ে গিয়েছে কিন্তু সামান্যটুকুও সাহায্য মেলেনি।’ উপার্জন না থাকায় এবং পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি কম হওয়ায় তরুণরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ ভিনরাজ্যে গিয়ে সোনার কাজ করছে, আবার কেউ অন্য কোনো কাজে যুক্ত হয়েছে।

সরকারি উদাসীনতা

শিল্পীদের অভিযোগ, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিল্পী রামপ্রসাদ দাস বলেন, ‘বিশেষ করে করোনার পর তাঁত শিল্প শ্মশানে পরিণত হয়েছে।’

যদিও রামজীবনপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণ তিওয়ারি এই বিষয়ে অবগত। তিনি জানান, তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে এনে এই শিল্পের করুণ দশা দেখিয়েছেন এবং সরকারকে তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে শিল্পীদের আশঙ্কা, সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই প্রাচীন ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, রামজীবনপুরের তাঁত শিল্প কি আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে, নাকি চিরতরে হারিয়ে যাবে?