বিশেষ: নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য ইলন মাস্কের ৩টি শিক্ষা মূলক টিপস, জেনেনিন কী কী?

বর্তমান বিজনেস ওয়ার্ল্ডের একচ্ছত্র অধিপতি ইলন মাস্ক। কঠোর পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছা আর অসাধারণ মেধার জোরে একজন অভিবাসী শিক্ষার্থী থেকে তিনি হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিলিয়নেয়ার। পে-প্যাল, টেসলা, স্পেস এক্স-এর মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর জনক মাস্ক তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।

২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল কংগ্রেসে মাস্ক বলেছিলেন, “আপনাদের প্রতিদিন সকালে উঠে চিন্তা করা উচিত যে আমাদের সামনে একটি অসাধারণ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।” তিনি নিজে শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকেন না, বরং তার সব স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আপনার মতো যারা বড় স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য মাস্কের দেওয়া তিনটি শিক্ষণীয় পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হলো।

১. নিজের ও অন্যদের ভবিষ্যতের জন্য লক্ষ্য তৈরি করুন
একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে আপনার দলের কর্মীদের বোঝাতে হবে যে, আপনার প্রতিষ্ঠানের এবং তাদের ব্যক্তিগত ভবিষ্যতের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কর্মীদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকা জরুরি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়ায় কর্মীদেরও যুক্ত করা। মাস্কের মতে, আপনি যদি মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি গড়তে চান, তাহলে সেই প্রকল্পের প্রথম বাসিন্দাদের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। তাদের মতামত, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং প্রয়োজনগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আপনার উদ্যোক্তাসুলভ উদ্দীপনা কর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিন। তাদের বোঝান যে তারা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাদের ভাবনাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সুযোগ দিন। এতে তারা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের মনে করবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবে।

২. কোম্পানিকে সমস্যা সমাধানের মেশিন বানাবেন না
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই সমস্যা থাকে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং সমাধান করা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু সব সমস্যাকেই বড় সমস্যা হিসেবে না দেখে মাথা ঠান্ডা রেখে সেগুলোর সমাধান করা শিখতে হবে। কিছু সত্যিকার বড় সমস্যা ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো যেন কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মাস্কের মতে, সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে পুরো টিমের ওপর চাপ না দিয়ে দ্রুত একটি মিটিং ডেকে শুধু আপনি এবং কিছু বাছাই করা সদস্য সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিন। এতে পুরো প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হবে না।

৩. কর্মীদের জীবন উন্নত করার জন্য কাজ করুন
বর্তমান বিশ্বে জীবনযাপনে ইতিবাচকতা খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার কর্মীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের সত্যিকার ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে। কর্মীদের এমন পরিবেশ দিন যেন তারা মনে করে যে, তারা প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এখানে কাজ করে তাদের নিজেদের জীবনেরও উন্নতি হচ্ছে।

গুগলের মতো সেরা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের সেরা কাজের পরিবেশ দেয় বলেই সেখানে কাজ করার জন্য সবার এত আগ্রহ। গবেষণা অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়, তাদের কর্মীরা ৯০% বেশি বিশ্বস্ত হয়। কর্মীদের বুঝতে দিন যে আপনি তাদের শুধু কর্মী হিসেবে নয়, বরং মানুষ হিসেবেও সম্মান করেন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে তাদের বিশেষ দিনগুলোতে (যেমন জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী) একটু আগে ছুটি দিন। আপনি আপন ভাবলে তারাও আপনাকে আপন ভাববে, এবং আপনার জন্যই নিস্বার্থভাবে কাজ করবে।

ইলন মাস্কের এই পরামর্শগুলো তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে এসেছে। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে তার এই শিক্ষাগুলো আপনার জন্য খুবই সহায়ক হতে পারে। কারণ, একটি প্রতিষ্ঠান একা বড় হতে পারে না, তার কর্মীদের দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হয়।