আরজিকর কাণ্ডের এক বছর পরেও পুলিশি হেনস্থার শিকার চিকিৎসকরা, প্রতিবাদে ফের মিছিল

গত বছর আরজিকর হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে যে বিশাল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার এক বছর পরেও সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের পুলিশি হেনস্থা ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। সম্প্রতি, ৪ জন চিকিৎসক— সুবর্ণ গোস্বামী, মানস গুমটা, দেবাশিস হালদার এবং পরিচয় পণ্ডা-কে বউবাজার থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের অভিযোগ, সরকার ও কর্তৃপক্ষের সমালোচনার কারণেই তাদের বারবার হয়রানি করা হচ্ছে।
কেন এই জিজ্ঞাসাবাদ?
পুলিশের দাবি, গত বছর উৎসবের সময় ধর্মতলায় চিকিৎসকদের যে প্রতিবাদ ও অনশন কর্মসূচি ছিল, তা বেআইনি কার্যকলাপ ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার জানিয়েছেন, তাকে প্রায় ৪২টি প্রশ্ন করা হয়েছে, যার অধিকাংশই ছিল মিছিল সংক্রান্ত। এমনকি, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণও চাওয়া হয়েছে, যা তদন্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে তিনি মনে করেন।
আন্দোলনকারী চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “পুলিশকে বলেছি, আপনারা কোনো অপরাধী খুঁজে পাচ্ছেন না, চিকিৎসকদের তলব করছেন। অথচ যে নেতারা পুলিশের বাড়ির মহিলাদের অপমান করেন, তাদের স্পর্শ করতে পারেন না।”
প্রতিবাদে চিকিৎসকদের নতুন আন্দোলন
চিকিৎসকদের এই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবাদে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস এবং অভয়া মঞ্চ শহরের রাজপথে আবার মিছিল করেছে। তারা মেডিক্যাল কলেজ থেকে বউবাজার থানা পর্যন্ত মিছিল করে পুলিশের এই কার্যকলাপের নিন্দা জানায়। তারা কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে এই মামলা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
শাসক দলের প্রতিক্রিয়া
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় পাল বলেছেন, “অনেকে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একাংশের চিকিৎসকরা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। বাম ও অতি বামেরা এর পিছনে রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দিতেই হবে।
অন্যদিকে, সিনিয়র চিকিৎসক কৌশিক চাকী শাসক দলকে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছিল, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার নাগরিকদের আছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগ করা চলবে না।