ট্রাম্পের শুল্কচাপ খোসা ছাড়াচ্ছে ভারতের, পুজোর আগে ইলিশের সঙ্গে পাঞ্জা লড়াইয়ে চিংড়ি!

বাঙালির উৎসবের মরসুম দরজায় কড়া নাড়ছে, আর এই আনন্দের সময়ে বাজারে ইলিশের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছে চিংড়ি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে অন্ধ্রপ্রদেশের চিংড়ি চাষিরা চরম সংকটে পড়েছেন। এর ফলে, পুজোর আগে দেশের বাজারে ব্যাপক পরিমাণে চিংড়ি ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে মাছের দাম কমিয়ে দিতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতির বলি ভারতের চিংড়ি শিল্প
ভারত থেকে আমেরিকায় সামুদ্রিক খাদ্য রফতানির প্রায় ৪০ শতাংশই হল চিংড়ি। এর সিংহভাগ উৎপাদিত হয় অন্ধ্রপ্রদেশেই। নতুন শুল্কনীতি অনুযায়ী, এখন আমেরিকায় ভারতীয় চিংড়ি রফতানিতে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসবে। এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় চিংড়ির চাহিদা প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। অন্ধ্রের চিংড়ি চাষিরা বলছেন, “আমেরিকায় এত বেশি দামে কেউ ভারতীয় চিংড়ি কিনবে না।”
চাষিদের দুর্দশা: অন্ধ্রপ্রদেশে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ পুকুরে চিংড়ি চাষ হয় এবং এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩০-৪০ লক্ষ মানুষ জড়িত। একই অবস্থা ওড়িশারও, যেখানে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে রফতানিকারকরা এখন চিংড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন, যা এই বিশাল সংখ্যক মানুষের রুজি-রোজগারকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
প্রতিযোগী দেশ: ভারতের এই বাজার এখন ইকুয়েডর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো দখল করে নিচ্ছে, যাদের ওপর শুল্কের হার অনেক কম।
দেশীয় বাজারে চিংড়ির অভাবনীয় প্রাচুর্য?
রফতানির দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিংড়ি চাষিরা এখন তাদের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে তারা দেশীয় বাজারে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো চিংড়ির বড় বাজারগুলোতে, তুলনামূলক কম দামে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হতে পারেন।
পুজোর সময় উত্তর ভারতে নবরাত্রি চলায় সেখানে মাছের চাহিদা কম থাকে। তাই পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসমের মতো রাজ্যগুলোই এখন চাষিদের প্রধান ভরসা। এর ফলে, পুজোর আগেই কলকাতার বাজারে ইলিশের সঙ্গে চিংড়ির দামের এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হতে পারে। বাঙালি মধ্যবিত্তদের পাতে কম দামে সুস্বাদু ডাব চিংড়ি, মালাইকারি বা সর্ষে চিংড়ির স্বাদ পৌঁছে দেওয়ার এক দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অন্ধ্র ও ওড়িশার চিংড়ি চাষিদের জন্য এটি সর্বনাশ হলেও, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের ভোক্তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। তবে, এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকার দ্রুত কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।