“CBI এক জায়গাতেই আটকে রয়েছে…”-দাবি আরজি কর নির্যাতিতার বাবা-মায়ের, তদন্ত কোন পথে?

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। গত বছর এই দিনে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল, তা শুধু একটি কলেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং গণ আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন মধ্যরাতে কলকাতার রাজপথ ছিল উত্তাল। সেই গণ আন্দোলনের রেশ ধরে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, এক বছর পরেও এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শিয়ালদহ আদালত গত বছর মাত্র ১৬২ দিনের মাথায় কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ১৬৪ দিনের মাথায় আমৃত্যু কারাবাসের সাজা ঘোষণা করে। কিন্তু এই রায় সত্ত্বেও, মামলার একাধিক দিক এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

নির্যাতিতার বাবা-মা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, সঞ্জয় রায় এই ঘটনার একমাত্র অপরাধী নয়, বরং এর পেছনে আরও অনেকের হাত রয়েছে। এই দাবিতে তাঁরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি নিম্ন আদালতে সিবিআই তাদের তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিয়েছে, যেখানে কিছু নতুন তথ্য ও সাক্ষ্য উঠে এসেছে। এদিকে, নির্যাতিতার পরিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের আবেদন জানালেও, নিম্ন আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।

একইভাবে, নির্যাতিতার পরিবার সিবিআই তদন্তের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলা দায়ের করেছে। তাঁদের দাবি, সিবিআই তদন্তের উপর তাঁদের আস্থা নেই এবং একটি নতুন সিট (SIT) গঠন করে তদন্ত করা হোক। হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে এই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

শিয়ালদহ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছে সিবিআই। তাদের মতে, এটি ‘বিরল থেকে বিরলতম’ ঘটনা এবং সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত। অপরদিকে, সঞ্জয় রায় নিজেও হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন যে, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে এবং তিনি নির্দোষ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে এই দুটি মামলা একসঙ্গে শোনা হবে বলে জানা গেছে, যার শুনানি আগামী মাসেই হতে পারে।

এই মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। নির্যাতিতার পরিবার একাধিকবার সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, সিবিআই কেবল সঞ্জয় রায়কেই দোষী সাব্যস্ত করার উপর জোর দিচ্ছে, কিন্তু বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকে নজর দিচ্ছে না।

এক বছর আগে যে ঘটনা কলকাতা এবং বাংলাকে প্রতিবাদে মুখর করেছিল, সেই প্রতিবাদ কিছুটা স্তিমিত হলেও, এই মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য এখনো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে গোটা রাজ্য।