AI-উন্নয়নে ২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিক্রি করবে মেটা, নেওয়া হচ্ছে বড় উদ্যোগ

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিস্তারের লক্ষ্যে মেটা প্ল্যাটফর্মস এক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিশাল এআই অবকাঠামো তৈরির ব্যয়ভার ভাগ করে নিতে ২.০৪ বিলিয়ন ডলারের ডেটা সেন্টার সংক্রান্ত সম্পদ বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আর্থিক অংশীদারিত্বের পথে মেটা
মেটা প্ল্যাটফর্মস তাদের চলমান ডেটা সেন্টার প্রকল্পগুলোর কিছু সম্পদ বিক্রি করে আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তাদের ত্রৈমাসিক ফাইলিং-এ এই পরিকল্পনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

মেটা জানিয়েছে, গত জুনে তারা এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। এর আওতায় ২.০৪ বিলিয়ন ডলারের জমি ও নির্মাণাধীন সম্পদকে “হেল্ড-ফর-সেল” (বিক্রির জন্য প্রস্তুত) হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই সম্পদগুলো আগামী ১২ মাসের মধ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষকে হস্তান্তর করা হবে, যারা ডেটা সেন্টার যৌথভাবে উন্নয়নে অংশ নেবে।

৩০ জুন পর্যন্ত মেটার মোট হেল্ড-ফর-সেল সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.২৬ বিলিয়ন ডলার। তবে এই সম্পদ বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটি কোনো ক্ষতি দেখায়নি। বরং ‘বুক ভ্যালু’ এবং ‘মার্কেট ভ্যালু’র মধ্যে যেটি কম, সেটির ভিত্তিতে তা মূল্যায়ন করা হয়েছে।

প্রযুক্তি শিল্পের নতুন বাস্তবতা
এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি জগতের একটি নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে আগে গুগল, অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলো তাদের সব অবকাঠামো নিজস্ব অর্থে নির্মাণ করত, সেখানে এখন তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ডেটা সেন্টার তৈরির বিপুল ব্যয় মাথায় রেখে আর্থিক অংশীদার খুঁজছে। এটি দেখায় যে, এআই প্রযুক্তির পেছনে বিনিয়োগের মাত্রা কতটা বিশাল এবং এটি এখন বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও আর্থিক সহযোগিতার কথা ভাবতে বাধ্য করছে।

মেটার চিফ ফিনান্স অফিসার সুসান লি এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে ডেটা সেন্টার উন্নয়নের উপায় খুঁজছি। যদিও আমরা অধিকাংশ ব্যয় নিজেরাই বহন করব, কিছু প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বাহ্যিক অর্থায়ন যুক্ত হতে পারে, যা ভবিষ্যতের পরিবর্তিত অবকাঠামো চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ দেবে।”

মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, এআই এবং সুপারইন্টেলিজেন্স-এর জন্য তারা “সুপারক্লাস্টার” নামে অনেক বড় ডেটা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এই সুপারক্লাস্টারগুলোর একটি পুরো ম্যানহাটনের বড় অংশের সমান।”

বিজ্ঞাপনী আয়ে বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের ভারসাম্য
এই ঘোষণার পাশাপাশি মেটা তাদের বার্ষিক মূলধন ব্যয়ের পূর্বাভাস ২ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে ৬৬ থেকে ৭২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞাপনী আয়ে চমকপ্রদ বৃদ্ধি। এআই নির্ভর কনটেন্ট ডেলিভারি ও টার্গেটিংয়ের উন্নতির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। এই বৃদ্ধি, মেটার দীর্ঘমেয়াদী এআই ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ব্যয় কিছুটা হলেও ভারসাম্য করতে সাহায্য করেছে।

মেটার এই নতুন কৌশল এআই অবকাঠামো নির্মাণে ভবিষ্যতে অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও একই পথে হাঁটতে উৎসাহিত করতে পারে। এটি কি এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বিকাশের একটি নতুন মডেলের সূচনা?