শিলিগুড়িতে বিজেপির ‘উত্তরকন্যা’ অভিযান, শুভেন্দু অধিকারীর অগ্নিবর্ষী বক্তব্য, আন্দোলনের নতুন দিশা

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি আজ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ‘উত্তরকন্যা অভিযান’কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা উত্তরকন্যার দিকে পদযাত্রা শুরু করলেও, পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে তারা মূল লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। তবে সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত বিশাল জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আগামী দিনের আন্দোলনের রূপরেখা স্পষ্ট করে দেন।
এদিনের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের আসন্ন একুশে জুলাই কর্মসূচিকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “একুশে জুলাই এখন কেবল একটি নির্দিষ্ট পরিবারের ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বা তাদের প্রকৃত সমস্যার সমাধানের কোনো দিশা সেখানে থাকে না। এটি শুধুমাত্র লোক দেখানো ভিড়, যেখানে রাজ্যের মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা দেখা যায় না।” তিনি আরও যোগ করেন, “যারা নিজেদের জনদরদী বলে দাবি করে, তারা আজ মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।”
বিরোধী দলনেতা তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন কেবল মিষ্টি কথায় মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে চাইছেন, কিন্তু মা-মাটি-মানুষের সরকার আজ দুর্নীতি আর অপশাসনের এক নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে।” শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, রাজ্যের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি শিকড় গেড়েছে এবং সাধারণ মানুষ তার ফল ভোগ করছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে সরকার নিজের রাজ্যের মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে না, তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।”
জনসভা থেকেই শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে আগামী দিনের বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি বলেন, “আজকের এই অভিযান শুধুমাত্র একটি শুরু। আমরা এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত থামব না। প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি বুথে আমরা মানুষের কাছে যাব এবং এই সরকারের আসল চরিত্র তুলে ধরব।” তিনি জানান, আগামী দিনে রাজ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে আরও কয়েকটি বড় মাপের কর্মসূচি নেওয়া হবে, যা এই সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। এই কর্মসূচিগুলির বিস্তারিত রূপরেখা শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।
বিজেপির এই অভিযানে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক যোগ দেন, যা দলের সাংগঠনিক শক্তির প্রদর্শন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযানকে গুরুত্বহীন আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, “বিজেপি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এ ধরনের লোকদেখানো কর্মসূচির আয়োজন করছে। বাংলার মানুষ তাদের সঙ্গে নেই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুভেন্দু অধিকারীর আজকের বক্তব্য এবং আন্দোলনের নতুন রূপরেখা ঘোষণার ফলে রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হবে। আগামী দিনগুলিতে এই রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়তে পারে।