২১শে জুলাইয়ের শহীদ সমাবেশ, ল্যাংচা মেলায় জনসমুদ্র, ‘দিদিই ভরসা’ স্লোগানে উৎসবের আবহে রাজনীতি

ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস সমাবেশের পর ফিরতি পথে শক্তিগড়ের ঐতিহ্যবাহী ল্যাংচা মেলায় দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। রাজনৈতিক সমাবেশের রেশ কাটতে না কাটতেই, ল্যাংচা ও মিষ্টির দোকানে ভিড় জমিয়েছেন কলকাতা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদগামী তৃণমূল সমর্থকরা। বিক্রেতাদের মুখে চওড়া হাসি, কারণ এবার শুধু ল্যাংচা নয়, পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে শক্তিগড়ের বিখ্যাত সীতাভোগ ও মিহিদানা।

ব্যর্থ মিষ্টি হাব, সফল ল্যাংচা মেলা:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পূর্ব বর্ধমান জেলায় মিষ্টি হাব শুরুর প্রচেষ্টা বারবার মুখ থুবড়ে পড়লেও, এবারের ২১শে জুলাই ‘শহিদ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত ল্যাংচা মেলা যেন ভিন্ন সাফল্য এনেছে। জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতি বছর শহীদ দিবস পালন করার জন্য কলকাতা যাওয়া-আসার সময় ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বাস ও গাড়ি থামিয়ে ল্যাংচা খাওয়ার ধুম পড়ত। এর ফলে ব্যাপক যানজট তৈরি হতো, যা যাত্রীদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ ছিল। এই সমস্যার সমাধানে বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিধায়ক নিশীথ মালিকের উদ্যোগে এবং শক্তিগড় থানা ও বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির ব্যবস্থাপনায় শক্তিগড়ের আমড়ায় ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় দু’দিনের এই ল্যাংচা মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রায় ৬৩ বিঘা জুড়ে ল্যাংচা বিক্রির অস্থায়ী স্টল তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পানীয় জল, শৌচালয় এবং চিকিৎসারও সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুসংগঠিত পার্কিং ব্যবস্থার কারণে যানজটের সমস্যাও এবার অনেকটাই কম।

নেত্রীই ভরসা: কর্মীদের অটল বিশ্বাস:

মেলায় আসা তৃণমূল সমর্থকদের কাছে শহীদ দিবসে মমতাকে দেখা ছিল এক পরম প্রাপ্তি। তাদের মতে, দলনেত্রীর জন্যই এই বিপুল জনসমাগম। শাসকদলের অন্দরেও এমন আশঙ্কা রয়েছে যে, মমতা না থাকলে এই ভিড় কর্পূরের মতো মিলিয়ে যাবে। শহীদ দিবসের বার্তা নিয়ে তারা এলাকায় বিজেপি ও সিপিআইএমের সঙ্গে টক্কর দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাদের আত্মবিশ্বাসের সুর, ছাব্বিশের নির্বাচনে ফের তৃণমূল সরকারই ক্ষমতায় আসছে।

তৃণমূল সমর্থকদের এই নিশ্চিন্ত থাকা, রাজ্যে পূর্বতন বাম জমানার সময় সিপিআইএম সমর্থকদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলনীয়। তৃণমূল নেতৃত্বও এটি মেনে নিচ্ছেন। ল্যাংচায় মজে এক তৃণমূল নেতা বলেন, “দিদির বিকল্প যতদিন না আসছে, ততদিন আমরা নিশ্চিন্ত।”

রাজনৈতিক কটাক্ষ ও বিতর্ক:

তবে, ২১শে জুলাইয়ের এই ‘উৎসব’ নিয়ে রাজনৈতিক কটাক্ষ থেমে নেই। বিজেপির পক্ষ থেকে এই সমাবেশকে ‘শহীদ দিবসের নামে মোচ্ছব’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। সিপিআইএম নেতৃত্ব আরও এক ধাপ এগিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন যে, মোদি যতই রাজ্যে এসে গর্জন করুন, আসলে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেটিং’ চলছে। তাদের দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত হলে তার জেল যাত্রা কেউ আটকাতে পারবে না।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতায় মিছিল চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি চালায়, যাতে বেশ কয়েকজন নিহত হন। সেই নিহতদের স্মরণেই প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হয়। পূর্বতন বাম সরকারের মূল শরিক দল সিপিআইএমের অভিযোগ, সেদিন নাশকতা ও হামলা রুখতে রাজ্য সরকার কড়া ভূমিকা নিয়েছিল। তবে, ২১শে জুলাই বিতর্ক সত্ত্বেও কোনো বাম নেতা বা তৎকালীন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

রাজনৈতিক সংঘাত, মিষ্টির স্বাদ এবং কর্মীদের অটুট বিশ্বাস – এই সবকিছু নিয়েই এবারের ২১শে জুলাইয়ের শহীদ দিবস এক ভিন্ন মাত্রায় উদ্ভাসিত হলো।