মুম্বইয়ে ফের ‘ভাষা যুদ্ধ’, পথ বিবাদ থেকে ‘হিন্দি-মারাঠি’ উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে, ভাইরাল ভিডিওতে চাঞ্চল্য

দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বইয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ‘হিন্দি-মারাঠি’ ভাষার বিতর্ক। সম্প্রতি ঘাটকোপারে এক মহিলাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ভাষাগত দ্বন্দ্বের ঘটনা শহরে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও এই ঘটনার তীব্রতা এবং স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজমান চাঞ্চল্যকে সামনে এনেছে।

পথ বিবাদ থেকে ভাষাগত আক্রমণ:

ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছেন সঞ্জিরা দেবী নামের এক মহিলা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সঞ্জিরা দেবী তাঁর বাড়ির বাইরে একটি সরু গলিপথে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্তরা উল্টো দাবি করেন এবং সঞ্জিরা দেবীকে মারাঠি ভাষায় কথা বলতে বলেন। সঞ্জিরা দেবী এই দাবি মানতে অস্বীকার করলে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি সঞ্জিরা দেবীর দিকে আঙুল তুলে তেড়ে এসে বলছেন, “মারাঠিতে কথা বলো। এটা মহারাষ্ট্র।” উত্তরে সঞ্জিরা দেবী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “না, আপনি হিন্দিতে বলুন। বলুন তো, আপনি কি হিন্দুস্তানি নন? আপনি কি হিন্দুস্তান থেকে নন?” এই কথা কাটাকাটির সময় আশপাশে কিছু লোক জমে যায় এবং ঝামেলা দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এমএনএস-এর ভাষা আন্দোলন ও পূর্বের ঘটনা:

এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর মারাঠি ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রচার অভিযান নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। খবর মারফত জানা গেছে, এর আগেও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ভাষাগত দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেছে। অতীতে এক দোকানদারকে ভাষাগত বিবাদে মারধর করা হয়েছিল। বিনিয়োগ পরামর্শদাতা সুশীল কেদিয়ার অফিসে ভাঙচুরের ঘটনাও সামনে এসেছিল, কারণ তিনি নাকি মারাঠি ভাষায় কথা বলতে অস্বীকার করেছিলেন।

এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকারের শিক্ষা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতির (NEP) তিন ভাষা নীতিকে কেন্দ্র করে অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, এর মাধ্যমে মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষার অযাচিত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

রাজনৈতিক মেরুকরণের নতুন ইঙ্গিত:

ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে মহারাষ্ট্রে যে রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, এই ঘটনাগুলো তারই সাম্প্রতিক প্রতিফলন। চলতি মাসের ৫ জুলাই রাজ ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরের এক যুগ্ম সমাবেশ এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুই দশক পর দুই ভাইয়ের এক মঞ্চে আসা এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনাগুলি মারাঠি আত্মপরিচয় এবং ভাষার সুরক্ষার নামে রাজনৈতিক মেরুকরণের আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সঞ্জিরা দেবীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা মুম্বইয়ের ভাষাগত সংঘাতের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এই ঘটনার পর পুলিশি তদন্ত শুরু হলেও, শহরের জনমানসে ভাষা কেন্দ্রিক উত্তেজনা কীভাবে প্রশমিত হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।