অপ্রত্যাশিত তাপপ্রবাহে ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে অসুস্থ ৪ হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা, মদন মিত্র হাসপাতালে, চিন্তায় দল

প্রতি বছর ২১শে জুলাই মানেই কলকাতার ধর্মতলায় বৃষ্টিস্নাত শহীদ দিবসের জনসভা। কিন্তু এবারের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। অঝোর ধারার বৃষ্টির বদলে এদিন আকাশ থেকে নেমে এল প্রখর রোদের তাপ এবং তীব্র আর্দ্রতা। এই অপ্রত্যাশিত খরতাপেই কাহিল হয়ে পড়লেন তৃণমূল কংগ্রেসের চারজন প্রথম সারির জনপ্রতিনিধি – সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা, কীর্তি আজাদ, শতাব্দী রায় এবং বিধায়ক মদন মিত্র। সভা চলাকালীনই অসুস্থ বোধ করায় তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এর মধ্যে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে এখনও এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে, যা নিয়ে দলের অন্দরে চিন্তা তৈরি হয়েছে।

সভামঞ্চে অসুস্থতা ও তড়িঘড়ি হাসপাতালে স্থানান্তর:

সোমবার সকাল থেকেই ২১শে জুলাইয়ের সভার মঞ্চ ছিল কড়া রোদের নিচে। কর্মীদের মতোই, মঞ্চে উপস্থিত হেভিওয়েট নেতাদের মাথার ওপরও ছিল না কোনো আচ্ছাদন। দীর্ঘক্ষণ প্রখর রোদে বসে থাকার ফলেই এই চারজন জনপ্রতিনিধি আচমকা অসুস্থ বোধ করেন। সূত্র মারফত জানা গেছে, সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শতাব্দী রায়, মদন মিত্র, কীর্তি আজাদ এবং শত্রুঘ্ন সিনহার মাথা ঘোরা, দুর্বলতা এবং প্রবল ঘামের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

সভায় উপস্থিত অন্যান্য নেতৃত্বের বিষয়টি নজরে আসতেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সভামঞ্চ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর অবস্থা দেখে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁদের সোজা এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল সূত্র জানায়, তীব্র গরমে ডিহাইড্রেশন জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল তাঁদের শরীরে।

মদন মিত্র পর্যবেক্ষণে, অন্যদের ছুটি:

প্রাথমিক চিকিৎসার পর সাংসদ শতাব্দী রায়, কীর্তি আজাদ এবং শত্রুঘ্ন সিনহাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা নিজ নিজ গাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু বর্ষীয়ান বিধায়ক মদন মিত্রের শারীরিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁকে আরও কিছুটা সময় পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ ও ‘নতুন খেলা’র ইঙ্গিত:

দলের এই চারজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের অসুস্থতার খবর পেয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। সভা শেষে তিনি নিজে ফোনে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থার আপডেট নেন।

এদিকে, ২১শে জুলাইয়ের এই অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার এক ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সভামঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, “প্রতিবার বৃষ্টি হয়। এ বার কিন্তু হয়নি। কেন বলুন তো? কারণ এবার শুরু হয়েছে নতুন খেলা। এবার আর চোখ দিয়ে জল পড়বে না, এবার আগুন বেরোবে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আগামী দিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের তীব্রতা এবং তাঁর আগ্রাসী মনোভাবের ইঙ্গিত বহন করছে।

প্রতি বছর শহীদ দিবস উপলক্ষে ধর্মতলায় মঞ্চের কাছাকাছি একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা থাকলেও, এদিনের পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর ছিল যে অসুস্থ জনপ্রতিনিধিদের দ্রুত এসএসকেএম-এর মতো বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এবারের ২১শে জুলাইয়ের এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।