“বাংলায় ভাষা আন্দোলন থেকে দুর্গা-অঙ্গন”-২১ শে জুলাইয়ে মমতার ভাষণের ১০ পয়েন্ট

ধর্মতলার ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর ভাষণ দিতে এসে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ এই ২১ জুলাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “৩৩ বছর আগে শুরু হওয়া আমাদের এই লড়াই চলবে, যতদিন না দিল্লি থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে পারি।” ধর্মতলার শহিদ দিবসের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সংস্কৃতি, ভাষা এবং স্বাভিমানের পক্ষে জোরালো সওয়াল তোলেন। বাঙালির উপর নিপীড়নের অভিযোগে তিনি বিজেপিকে তীব্রভাবে বিদ্ধ করেন এবং কেন্দ্রকে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন।
**দেশ থেকে বিজেপিকে তাড়ানোর ডাক ও কড়া হুঁশিয়ারি:**
বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দেন, “সবাইকে জেলে ভরে দিচ্ছেন! কিন্তু মনে রাখবেন, আগামী দিনে মানুষই গণতন্ত্রের রায়ে আপনাদের জেলে ভরে দেবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।” তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অবিচার’ ও ‘বদলার রাজনীতি’ এখন চরমে পৌঁছেছে। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “বাংলাকে বদলাতে গিয়ে ভারত সরকারের বদল হবে না তো! কী বন্ধুরা, বাংলায় তো বদল হয়ে গেছে, দিল্লিতে বদল করতে হবে। ছক্কা মারতে হবে, বিজেপিকে একেবারে বোল্ড আউট করতে হবে, আর সিপিএমকে মহাশূন্যে পাঠাতে হবে।” বিজেপিকে তোপ দেগে মমতার আর্জি, “ওদের না আছে জ্ঞান, না আছে গম্যি। সোশাল মিডিয়ায় যা দেয় তা দেখে বিশ্বাস করবেন না।”
**’বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস’ ও ২৭ জুলাই থেকে নতুন ভাষা আন্দোলনের ডাক:**
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, বাংলায় একের পর এক উন্নয়নে ভয় পেয়ে বিজেপি বঞ্চনার রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে কেন? বাংলা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। নবজাগরণ হয়েছে বাংলা থেকেই। বাংলার মাটি দুর্বৃত্তদের হবে না। বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয় এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে। আমি কিন্তু ছাড়ার লোক নেই। মনে আছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কথা?” তিনি আরও বলেন, “দরকারে আবার ভাষা আন্দোলন শুরু হবে।”
তিনি আগামী ২৭ জুলাই ‘নানুর দিবস’ থেকে প্রতি শনি ও রবিবার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে মিটিং-মিছিল করার ডাক দেন। তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “ভাষা রক্ষার শপথ নিচ্ছি, প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু বাংলা ভাষার উপর এই সন্ত্রাস মেনে নেওয়া হবে না।” গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সাংসদদের ধর্ণা কর্মসূচিরও ঘোষণা করেন তিনি এবং নাগরিক সমাজকে এই ধর্ণায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
**কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ ও রাজ্যের উন্নয়ন:**
তৃণমূলনেত্রী অভিযোগ করেন যে কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও তাঁর সরকার বাংলার মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ৯৪টি সামাজিক প্রকল্প চালাচ্ছে, গরিবদের আবাস প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন ধর্মস্থানের উন্নয়ন করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতেও রাজ্য সরকার কাজ করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
**বিজেপিশাসিত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ও প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ:**
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “মতুয়া ভাইদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কী জবাব দেবে তার বিজেপি? যখন ওড়িশায় ছাত্রীর সম্মান নষ্ট হল, যখন ওড়িশার রাস্তায় ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরানো হয়, তার উত্তর কে দেবে? উত্তর দিতে হবে।” অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “আপনি অসম সামলাতে পারছেন না। আর বাংলায় নাক গলাচ্ছেন। সুস্মিতা দেবকে বলব দরকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। দরকার হলে আমরা সবাই যাব। দেখব কতজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখেন।”
নাম না করেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বললে অ্যারেস্ট করবেন, আর টেলি প্রম্পটার দেখে দুটো বাংলা কথা বলবেন? মনটা বড় করতে শিখুন। দেশের কী অবস্থা? আপনাদের কন্ট্রোল করছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে পারলেন না? এত রক্তের বিনিময়েও? আপনারা না হিন্দু না মুসলমান, না খ্রিস্টান। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যখন কোমরে দড়ি বেঁধে পাঠিয়ে দিলেন, তখন আপনারা প্রতিবাদ করেননি কেন? আগে নিজেদের আয়নায় দেখুন, তারপর বলুন।” একই সঙ্গে তিনি সিপিএমকে আক্রমণ করে বলেন, “নর কঙ্কালের সরকার বাংলাকে শেষ করে দিয়েছিল। রাম-বাম এক হয়ে বাংলার সর্বনাশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু মানুষ রায় দিয়েছে উন্নয়নের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে।”
**নতুন স্লোগান ও দুর্গা অঙ্গনের ঘোষণা:**
একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন স্লোগানও দেন: “এখান থেকেই বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। এ বার বলছি, ‘জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে।’ আমাদের দর্শন, তোমাদের বিসর্জন। বাকিটা নির্বাচনের সময় বুঝিয়ে বলব।”
দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির পর এবার ‘দুর্গা অঙ্গন’ করার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জগন্নাথ ধামের অনুকরণে এ বার দুর্গা-অঙ্গন বাংলায় করে দেব। সারা বছর যাতে মানুষ যাতে পুরোটা দেখতে পারেন।”
**বৃষ্টি না হওয়ার ব্যাখ্যা:**
এবারের ২১ জুলাইয়ে বৃষ্টি না হওয়ার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “এবার কেন বৃষ্টি হয়নি বলুন তো? এবার নতুন খেলা শুরু হয়েছে। চোখ দিয়ে জল নয়, এবার আগুন বেরবে।”
“`