সংসদে ‘বিজয় উৎসব’ বনাম বিরোধীদের হট্টগোল, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে অচলাবস্থা

আজ থেকে শুরু হওয়া সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল। একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের ‘বিজয় উৎসব’ পালনের ডাক দিয়েছেন, অন্যদিকে বিরোধীরা কাশ্মীর হামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি এবং আলোচনার দাবিতে দফায় দফায় সংসদ অচল করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিজয় উৎসব’ ও সামরিক শক্তির প্রশংসা:
অধিবেশন শুরুর আগে তাঁর প্রথাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা, রাজনাথ সিং, নির্মলা সীতারমণ প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে চলমান বাদল অধিবেশনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মোদী তাঁর বক্তব্যে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ১০০% সাফল্যের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এই বর্ষাকালীন অধিবেশন ‘বিজয় উৎসব’-এর মতো। সমগ্র বিশ্ব ভারতের সামরিক শক্তির শক্তি দেখেছে। অপারেশন সিঁদুরের আওতায়, সন্ত্রাসবাদীদের আস্তানা ২২ মিনিটের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ সামরিক শক্তির এই নতুন রূপের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠকে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্রের প্রতি তাদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
বিরোধীদের আট দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতার প্রশ্ন:
তবে সরকারের এই ‘বিজয় উৎসবের’ মেজাজকে ম্লান করে দিয়েছে বিরোধীদের তীব্র হট্টগোল। কংগ্রেস এবং INDIA জোটের অন্যান্য দলগুলি বাদল অধিবেশনে উত্থাপন করার জন্য পহেলগাঁও হামলা এবং বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন সহ আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করেছে। বিরোধীরা এই বিষয়ে আলোচনার জন্য স্থগিতাদেশের নোটিশ দিলেও, তা গৃহীত হয়নি।
লোকসভায় বিরোধীরা ক্রমাগত স্লোগান দিতে থাকে, যার ফলে অধিবেশন প্রথমে দুপুর ১২টা এবং পরে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতুবি করতে হয়। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, “…প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে সংসদে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাকে সহ বিরোধী দলনেতাকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়নি… এটি একটি নতুন পদ্ধতি… রীতি অনুযায়ী, যদি সরকার পক্ষের লোকেরা কথা বলতে পারে, তাহলে আমাদেরও কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত।” কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতির মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, “যদি তারা (সরকার) আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তাহলে তাদের বিরোধী দলনেতাকে কথা বলতে দেওয়া উচিত। তিনি কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তাই তাকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া উচিত।”
সূত্র মতে, বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটি (BAC)-তে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ ইস্যুতে তাঁর জবাবদিহিতার উপর জোর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে বিরোধীদের চাপের কথাও অবহিত করা হয়েছে।
একদিকে যখন সরকার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যকে উদযাপন করতে চাইছে, অন্যদিকে বিরোধীরা জাতীয় নিরাপত্তা এবং অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি জবাবদিহিতার দাবিতে অনড়। এই সংঘাতের আবহে সংসদের বাদল অধিবেশন কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।