‘বাংলা ও বাঙালি’ই ২৬-এর নির্বাচনী রণকৌশল, ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেকের ‘জয় বাংলা’ চ্যালেঞ্জ

আগামী ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল ইস্যু হতে চলেছে ‘বাঙালি ও বাংলা ভাষা’। সোমবার ধর্মতলায় তৃণমূলের শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা ছিল স্পষ্ট, এবং তাঁর সুরেই জাতি ও ভাষার এই ‘লড়াই’কে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি ঘোষণা করলেন, ছাব্বিশের নির্বাচনের পর ‘জয় বাংলা’ বলাবেনই।

‘জয় বাংলা’র হুঙ্কার: উত্তাপ বাড়াল রাজ্য রাজনীতিতে

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অসমের ‘ফরেনার্স ট্রাইবুন্যালে’র এনআরসি নোটিশ পাঠানো নিয়ে তীব্র সরব হন। এই ইস্যুতেই তিনি বলেন, “আগে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতো মনে আছে! ঠেলায় না-পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না। এখন বলছে ‘জয় মা-কালী’, ‘জয় মা-দুর্গা’। আর আজকে আমার নাম দিয়ে লিখে রাখুন, একুশে জুলাই, ২০২৫। ছাব্বিশের পর ‘জয় বাংলা’ বলাবো। না-বলাতে পারলে…!” অভিষেকের এই প্রত্যয়ী মন্তব্য নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে আগামী দিনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলবে।

‘দু’টো E’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ: ইডি ও ইসি’র অপব্যবহার?

‘এসআইআর’ বা ‘স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন’ ইস্যুতেও বিজেপিকে নিশানা করেন অভিষেক। এনআরসি-র প্রসঙ্গ টেনে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) এবং ইসি (ইলেকশন কমিশন) কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার গুরুতর অভিযোগ তোলেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কত ক্ষমতা আছে বিজেপির! একদিকে ইডিকে দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া। আর অন্যদিকে, ইলেকশন কমিশনকে দিয়ে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া। দু’টো ‘E’, একটা ইডি, আরেকটা ইসি। এই দু’টো ‘E’-কে কাজে লাগিয়ে একদিকে বিরোধী নেতাদের জেলে ঢোকাচ্ছে। আরেকদিকে বিরোধী দলের ভোটার তথা ভারতবাসীর ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে।” তাঁর এই বক্তব্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল।

সংসদে বাংলায় ভাষণের চ্যালেঞ্জ: হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে নিশানা

বাংলা ভাষা ইস্যুতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে সরাসরি নিশানা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলা ভাষা নিয়ে ‘নিদান’ (নির্দেশ) ইস্যুতেই বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেন, “বাংলায় কথা বললে বিজেপির অসমের নেতা বলছে বাংলাদেশি। একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাংলায় কথা বলা যাবে না। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে? সংসদে এবার বাংলায় ভাষণ দেব। দেখব কার গায়ে কত জ্বালা। আগে ১০টা কথা বাংলায় বলতাম। এবার পাঁচশোটা কথা বলব। আপনারাও গর্বের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলবেন। এটা আমাদের মাতৃভাষা। দেখব কার কত জ্বালা।” অভিষেকের এই হুঁশিয়ারি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাংলা ও বাঙালিকে অবজ্ঞা করার অভিযোগকে আরও জোরালো করল।

২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতৃত্বের এই বার্তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ‘বাঙালি আত্মপরিচয়’ এবং ‘বাংলা ভাষার সম্মান’ তাদের প্রধান নির্বাচনী হাতিয়ার হতে চলেছে।