‘একটাও বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় নয়’, শিলিগুড়ি থেকে শুভেন্দুর বিতর্কিত হুঙ্কার

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ভোট এবং নাগরিকত্বের বিতর্ক নতুন কিছু নয়। তবে এবার সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার শিলিগুড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় হুঙ্কার দিলেন, “একটাও বাংলাদেশি মুসলমানকে ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না। একটাও রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না।” একইসঙ্গে তিনি বিহারের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গেও ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) চালু করার কথা ঘোষণা করেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক এবং নাগরিকপঞ্জী (NRC) বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিল। তার এই ঘোষণা বিজেপির মূল এজেন্ডাগুলির একটিকে সামনে নিয়ে এসেছে, যা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের উপর জোর দেয়।
কেন এই মন্তব্য এখন?
নির্বাচনের আগে বরাবরই এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা ব্যবহৃত হয়। শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য একদিকে যেমন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী ভোটব্যাঙ্ককে সংহত করার চেষ্টা, তেমনি অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানোর একটি কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ‘বাংলাদেশি মুসলমান’ এবং ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে তিনি একদিকে যেমন অনুপ্রবেশের সমস্যাকে সামনে এনেছেন, তেমনি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উপরও ইঙ্গিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
‘এসআইআর’ (SIR) কী এবং কেন বিতর্কিত?
শুভেন্দু অধিকারী বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ‘এসআইআর’ (Special Intensive Revision) অর্থাৎ ‘বিশেষ নিবিড় পর্যালোচনা’ চালু করার কথা বলেছেন। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হয়, যাতে কোনো অবৈধ ব্যক্তি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হতে পারে। যদিও এর উদ্দেশ্য ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রাখা, সমালোচকদের মতে, এটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে লক্ষ্য করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমনটা অতীতে আসামে NRC প্রক্রিয়ার সময় অভিযোগ উঠেছিল। যদি পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, তবে তা বড় আকারের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের পর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যকে ‘বিভাজনমূলক’ এবং ‘সংবিধান বিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, এটি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার একটি চেষ্টা। অন্যদিকে, সংখ্যালঘু সংগঠনগুলিও এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শুভেন্দু অধিকারীর এই হুঙ্কার আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই মন্তব্য একদিকে যেমন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে আরও জোরদার করবে, তেমনি অন্যদিকে বিরোধীদের কাছেও পাল্টা আক্রমণের সুযোগ এনে দেবে।