জেমিনিকে হাতিয়ার করে জিমেলে ভয়াবহ হ্যাকিং! গুগল নিজেই জারি করল সতর্কবার্তা, কীভাবে বাঁচবেন?

বিশ্বজুড়ে ১৮০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারীর ভরসা জি-মেইল এখন এক নতুন ও মারাত্মক সাইবার হামলার মুখে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শুরু করে কর্পোরেট লেনদেন—সব ক্ষেত্রেই জি-মেইলের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এটি বরাবরই হ্যাকারদের অন্যতম প্রিয় লক্ষ্য। তবে সম্প্রতি যে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে, তা বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। স্বয়ং গুগল তাদের নিজস্ব অত্যাধুনিক AI চ্যাটবট, ‘গুগল জেমিনি’ (Google Gemini)-কেই অস্ত্র বানিয়ে জি-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার প্রবণতা সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করেছে।
কীভাবে ফাঁদ পাতছে হ্যাকাররা?
প্রতারণার এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং উদ্বেগজনক। হ্যাকাররা巧妙ভাবে জেমিনিকে বিভ্রান্ত করে ক্ষতিকারক বার্তা পাঠাচ্ছে। এর ফলে, গুগলের নিজস্ব AI চ্যাটবট কোনো রকম সতর্কতা জারি করতে পারছে না, যা ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। ব্যবহারকারীরা অজান্তেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিচ্ছেন এবং ক্ষতিকর ওয়েবসাইটগুলিতে প্রবেশ করে ফেলছেন।
এই প্রতারণামূলক ইমেলগুলির অধিকাংশই জরুরি বা বাণিজ্য সংক্রান্ত বার্তা হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে আসে। হ্যাকাররা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে, যেখানে তারা ফন্ট সাইজ শূন্য করে এবং টেক্সটের রঙ সাদা করে ‘অদৃশ্য’ প্রম্পট পাঠায়। যেহেতু জেমিনি এই অদৃশ্য প্রম্পটগুলি পড়তে পারে না, তাই এটি বোকা বনে যায় এবং কোনো বিপদ সংকেত দেয় না। যখন ব্যবহারকারীরা জেমিনিকে ‘এই ইমেইলটি সারসংক্ষেপ করুন’ (Summarize this email) বলে নির্দেশ দেন, তখন জেমিনি সেই গুপ্ত বার্তাও পড়ে ফেলে। সেই বার্তায় অনেক সময় ‘গুগল সাপোর্ট’-এর ভুয়ো ফোন নম্বরও দেওয়া থাকে, যা দেখে ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হন। এই প্রক্রিয়ায় হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড, ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) সহ সব সংবেদনশীল ডেটা হাতিয়ে নিচ্ছে।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে? গুগলের পরামর্শ:
এই নতুন ধরনের হ্যাকিং থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে গুগল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে:
১. সারাংশে সতর্কতা: যদি জেমিনির তৈরি করা ইমেলের সারাংশে ‘জরুরি নিরাপত্তা সতর্কতা’ (Urgent Security Warning) বা ‘পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের অনুরোধ’ (Password Change) এর মতো কোনো শব্দবন্ধ দেখেন, তাহলে অবিলম্বে সতর্ক হোন। গুগল সাধারণত ইমেল বা জেমিনির মাধ্যমে আপনাকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলবে না।
২. নিজেই যাচাই করুন: যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বা সন্দেহজনক ইমেল শুধুমাত্র AI সারাংশের উপর নির্ভর না করে নিজে মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখুন। এতে লুকানো প্রম্পট বা ক্ষতিকর বার্তা থাকলে তা ধরতে পারবেন।
৩. লিঙ্ক ও নম্বর যাচাই: ইমেলের মধ্যে দেওয়া কোনো ফোন নম্বর বা লিঙ্কে যাচাই না করে কখনোই ক্লিক করবেন না বা ফোন করবেন না। হ্যাকাররা ভুয়ো লিঙ্ক বা নম্বর দিয়ে আপনাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে পারে।
৪. গুগলের নীতি: মনে রাখবেন, গুগল কখনো জি-মেইল সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি ফোন নম্বর দেয় না বা ইমেলের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বা পাসওয়ার্ড চাইতে পারে না।
এই নতুন হ্যাকিং পদ্ধতি সাইবার অপরাধীদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাই, ১৮০ কোটিরও বেশি জি-মেইল ব্যবহারকারীকে এখন আগের চেয়েও বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি এর অপব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকাটা এখন অপরিহার্য।