“মেয়েরা যা চায়, করতে দিন, গোঁড়ামি প্রথা মুক্ত হোক”-নারী স্বাধীনতায় জোর মোহন ভাগবতের

মহারাষ্ট্রের শোলাপুরে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (RSS) প্রধান মোহন ভাগবতের নারী ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘দেশের উন্নয়নের জন্য নারী ক্ষমতায়ন জরুরি’ এবং ‘মহিলাদের গোঁড়ামি প্রথা থেকে মুক্ত করা উচিত’ – ভাগবতের এই উক্তি একদিকে যেমন প্রগতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনই আরএসএস-এর চিরাচরিত রক্ষণশীল ভাবধারার সঙ্গে এর সাযুজ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঠিক কী বলেছেন আরএসএস প্রধান? তাঁর কথায়, “এক জন পুরুষ মৃত্যু পর্যন্ত কাজ করে চলেন। এক জন মহিলাও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করেন। কিন্তু আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগান। মহিলাদের স্নেহ-ভালবাসায় সন্তানরা বড় হয়ে ওঠে।” এই মন্তব্য পরম্পরাগত নারী ভূমিকার ওপর জোর দিলেও, এরপরই তিনি দেশের উন্নয়নে নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং দাবি করেন যে, “মহিলাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছে ভগবান। যে কাজগুলি পুরুষরা করতে পারেন না…”

তবে, সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তাঁর এই মন্তব্য: “ইগোর কোনও জায়গা নেই। মহিলারা যা করতে চান, করতে দিন। শুধু ওঁদের ক্ষমতায়ন করুন। পুরনো গোঁড়া প্রথা থেকে মুক্ত করুন। যখন এক জন মহিলা নিজের উন্নতি করবেন, তখন তিনি সমাজেরও উন্নতি করবেন।” এই বক্তব্যকে যদি আরএসএস-এর সামগ্রিক নারী ভাবনা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আরএসএস-এর নারী শাখা ‘রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি’র কাজের ধরন এবং সমাজে নারীর ভূমিকা নিয়ে সঙ্ঘের দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এই মন্তব্য কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সম্প্রতি আরএসএস বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে তাদের অবস্থান নরম করার চেষ্টা করছে। চলতি বছরে মন্দির-মসজিদ ইস্যু নিয়ে ভাগবতের সম্প্রীতির বার্তা এবং “রাম মন্দির নির্মাণের পর অনেকেই এই ধরনের বিতর্ক উস্কে দিয়ে হিন্দুদের নেতা হওয়ার কথা ভাবছেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না” – এই মন্তব্যগুলো সঙ্ঘের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতাতেই নারী ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে ভাগবত হয়তো আধুনিক ভারতের মূল স্রোতের সঙ্গে সঙ্ঘকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চাইছেন।

তবে, স্রেফ মুখে বলা কথা কতটা কাজে প্রতিফলিত হয়, সেটাই দেখার বিষয়। ‘গোঁড়া প্রথা থেকে মুক্তি’র কথা বলে আরএসএস কি সত্যিই নারীর স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে পূর্ণ সমর্থন জানায়, নাকি এটি কেবলই জনসমক্ষে সঙ্ঘের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার একটি প্রয়াস, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।