“এভাবে বাঁচতে পারব না”-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের ‘হেনস্থা’য় আত্মঘাতী হলেন ছাত্রী

মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গ্রেটার নয়ডার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার রাতে হোস্টেলের কক্ষ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে, যেখানে গুরুগ্রামের ওই ছাত্রী বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের নাম উল্লেখ করে মানসিক হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তীব্র চাঞ্চল্য ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত ছাত্রীর নাম জ্যোতি শর্মা। সুইসাইড নোটে জ্যোতি স্পষ্ট লিখেছেন যে, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কিছু অধ্যাপকের হাতে মানসিক হেনস্থা ও অপমানের শিকার হচ্ছিলেন। এর ফলে তিনি চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। নোটে তিনি অভিযুক্তদের জেলে দেখতে চেয়েছেন। ‘আমি ওদের জেলে ঢোকাতে চাই। ওরা আমায় মানসিক ভাবে হেনস্থা করেছে। অপমান করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ে মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে,’ – নোটে লিখেছেন জ্যোতি।

গ্রেফতার ও তদন্তের নির্দেশ

শুক্রবার রাতের এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। গ্রেটার নয়ডার অতিরিক্ত ডিসিপি সুধীর কুমার জানিয়েছেন, ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন পর্ষদের দুজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু করেছে এবং সুইসাইড নোটের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও কর্তৃপক্ষের আশ্বাস

এই মর্মান্তিক ঘটনা সামনে আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শিক্ষার্থীদের দাবি, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ আধিকারিক ড. অজিত কুমার জানিয়েছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই অধ্যাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। এছাড়াও, ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ড. কুমার বলেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।”

শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন, শিক্ষাঙ্গনে এমন মানসিক নির্যাতনের ঘটনা কেন ঘটল? বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষ কতটা দায়বদ্ধ, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের আচরণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার গুরুত্বকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।