নিউটাউনে সাধারণের স্বপ্নপূরণে রাজ্যের নয়া উদ্যোগ, মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মমতা

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কলকাতার নিউটাউনের বুকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নিজন্ন’ এবং ‘সুজন্ন’ নামে দুটি অত্যাধুনিক বহুতল আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আবাসন প্রকল্পের অর্থায়নে কেন্দ্রের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে তীব্র আক্রমণে মুখর হন।
‘আমরা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকব না’:
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ি তৈরির জন্য কোনো অর্থ দেয় না কেন্দ্র। তাই রাজ্য নিজেই উদ্যোগ নিয়ে এই আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছে। বাংলার উন্নয়নের জন্য আমরা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকব না।” তাঁর এই মন্তব্য রাজ্যের স্বাবলম্বী হওয়ার বার্তা এবং একই সাথে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগকে তুলে ধরেছে।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য আধুনিক শহরের স্বপ্ন:
সাত একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই আবাসন প্রকল্পটি মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এখানে থাকবে আধুনিক পরিকাঠামো, সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট, নিরাপদ ও সবুজ পরিবেশ। শিশুদের জন্য পার্ক এবং বিনোদনের পরিকাঠামোও রাখা হয়েছে। রাজ্য সরকারের আশা, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বহু সাধারণ মানুষ শহরে নিজের ফ্ল্যাটের স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন।
‘নিজন্ন’ প্রকল্পে রয়েছে ৩০০ বর্গফুটের ৪১০টি ওয়ান-বিএইচকে ফ্ল্যাট। অন্যদিকে, ‘সুজন্ন’-তে থাকছে ৬২০ থেকে ৭৩০ বর্গফুটের ৭৩০টি টু-বিএইচকে ফ্ল্যাট। সব মিলিয়ে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১,২১০। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ফ্ল্যাটগুলি লটারির মাধ্যমে বাজারদরের তুলনায় অনেক সস্তায় বিক্রি হবে। ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ তৈরিতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা, যার সম্পূর্ণ খরচ রাজ্য সরকার নিজেই বহন করেছে। এই জমি রাজ্য সরকার বিনামূল্যে দিয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শুধুই আবাসন নয়, উন্নত জীবনযাত্রার প্রতিশ্রুতি:
আবাসন প্রকল্পের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন অত্যাধুনিক বহুতল পার্কিং কমপ্লেক্স ‘সুসম্পন্ন’-এরও উদ্বোধন করেন। রাজারহাটে তৈরি হওয়া এই আটতলা পার্কিং লটে প্রায় ১৫০০ গাড়ি রাখা যাবে এবং এখানে থাকছে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শুধু আবাসন নির্মাণেই নয়, বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দিকেও রাজ্য সরকার নজর দিয়েছে। শিশুদের জন্য থাকছে ‘তরন্ন’ নামে বিনোদন পার্ক, একটি মুক্তমঞ্চ, সবুজ উদ্যান, ক্যাফেটেরিয়া, ফুড কোর্ট এবং মর্নিং ওয়াকের জন্য উপযুক্ত স্থান।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আবারও ক্ষোভ:
আবাসনের খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি বলেন, “আমরা বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ৪৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করেছি। কিন্তু কেন্দ্র টাকা দেয়নি। তাই নিজেরা খরচ করেই এই আবাসন গড়ে তুলেছি।” পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের অসহযোগিতার কারণে রাজ্যের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প থমকে রয়েছে। তবুও রাজ্য থেমে নেই, তারই প্রমাণ এই ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ প্রকল্প – এমনটাই তাঁর দাবি।
এই প্রকল্প একদিকে যেমন শহরমুখী মানুষের আবাসনের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে, তেমনই রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ এবং কেন্দ্রের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েনকে আরও একবার সামনে নিয়ে এল।