ওড়িশার শিক্ষাঙ্গনে শ্লীলতাহানির ছায়া, বালেশ্বরের পর এবার সাম্বলপুর, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ

বালেশ্বরের ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজের এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ওড়িশার শিক্ষাঙ্গনে ফের যৌন হেনস্থার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এবার পশ্চিম ওড়িশার সাম্বলপুর শহরের গঙ্গাধর মেহের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
একই সপ্তাহে দ্বিতীয় ঘটনা: সাম্বলপুরের গঙ্গাধর মেহের বিশ্ববিদ্যালয়
পুলিশ সূত্রে খবর, গঙ্গাধর মেহের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত অধ্যাপক গোপীচাঁদ সুনা তাঁরই কলেজের এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে নিজের সরকারি কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন করেন। ছাত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ জোগাড় করে। এরপরই অধ্যাপক গোপীচাঁদ সুনাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন বালেশ্বরের ঘটনায় রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা এমনিতেই প্রশ্নের মুখে।
বালেশ্বরের মর্মান্তিক আত্মহত্যা: অধ্যাপক সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ
গত শনিবার দুপুরে বালেশ্বরের ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজের ইন্টিগ্রেটেড বি.এড কোর্সের এক ছাত্রী কলেজের প্রিন্সিপালের অফিসের সামনেই নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন। অভিযোগ, তাঁর বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সমীর কুমার সাহু ওই ছাত্রীকে একাধিকবার অশালীন প্রস্তাব দেন, যা সরাসরি যৌন হেনস্থার পর্যায়ে পড়ে। প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনি ছাত্রীর ভবিষ্যৎ খারাপ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী এই মর্মে কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির কাছে গত ১লা জুলাই লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছিলেন। কমিটি সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, অভিযোগ উঠেছে যে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। শনিবার এই ঘটনার বিরুদ্ধে তরুণী সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজ গেটে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। আচমকাই তিনি দৌড়ে অধ্যক্ষের অফিসের কাছে যান এবং নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। সেই মর্মান্তিক দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যেখানে দেখা যায়- আগুনে জ্বলতে থাকা ছাত্রীটিকে বাঁচাতে গিয়ে আরেক ছাত্রও অগ্নিদগ্ধ হন। পরে কলেজের কর্মীরা আগুন নিভিয়ে তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই ছাত্রীকে প্রথমে বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে এবং পরে ভুবনেশ্বরের এইমসে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ছাত্রীর শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সোমবার রাতে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন:
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এবং একটি আত্মহত্যার ঘটনা ওড়িশার শিক্ষাব্যবস্থা এবং ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনাগুলি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার অভাবকে স্পষ্ট করেছে। জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনাগুলি ওড়িশার শিক্ষা ব্যবস্থায় এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।